সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২ সেপ্টেম্বর: স্কুল সার্ভিস কমিশনে গ্রুপ সি ও ডি পদে ছেলে ও দুই আত্মীয়ের চাকরি করে দেওয়ার জন্য শাসক দলের দাপুটে নেতা পঞ্চায়েত সমিতির তৎকালীন কর্মাধ্যক্ষকে ২০ লক্ষ টাকা দিয়েও চাকরি না হওয়ায় এবং দেওয়া টাকা ফেরৎ না পেয়ে আত্মঘাতী হলেন তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কোতুলপুরের দেশড়া কোয়ালপাড়ায়।
অভিযোগ, ছেলে ও দুই আত্মীয়ের চাকরির জন্য তৃণমূলের দাপুটে নেতা তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দাবি মতো ২০ লক্ষ টাকা দেন স্থানীয় দেশড়া কোয়ালপাড়া পঞ্চায়েতের এক প্রাক্তন প্রধানের স্বামী। দীর্ঘ ৭ বছর পার হয়ে গেলেও চাকরি না হওয়া এবং বারবার চেয়েও টাকা ফেরৎ না পেয়ে আত্মহত্যা করেন পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের স্বামী।
এবিষয়ে এক লিখিত অভিযোগ থানায় দায়ের হতেই বেপাত্তা হয়ে গেছেন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ। গত ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তৃণমূলের দখলে থাকা কোতুলপুর ব্লকের দেশড়া কোয়ালপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন রূপা মণ্ডল। অন্যদিকে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ তৃণমূল পরিচালিত কোতুলপুর পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২০১৭ সালে এই সন্দীপবাবু রূপাদেবীকে জানান যে, দলের প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার বিশেষ যোগ
রয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ সি ও ডি পদে তিন থেকে চার জনের চাকরি তিনি করে দিতে পারবেন। তবে তারজন্য লাগবে মোটা অঙ্কের টাকা।সেই প্রস্তাব অনুসারে নিজের ছেলে ও দুই আত্মীয়ের চাকরির জন্য রূপাদেবীর স্বামী ধর্মদাসবাবু ২০ লক্ষ টাকা তুলে দেন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের হাতে। তারপর দীর্ঘ ৭ বছর পার হলেও চাকরি মেলেনি। বারবার দাবি করেও ফেরৎ তো মেলেনি দেওয়া টাকা, উপরন্তু নিয়মিত মিলত হুমকি বলে অভিযোগ। সেই কারণে মানসিক অবসাদে পড়েন তিনি। সেই অবসাদ থেকে এবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী। বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানায় এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই বেপাত্তা হয়ে যান অভিযুক্ত প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্থানীয় ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হলে চাকরি পাওয়ার আশা পুরোপুরি হারান রূপা। এরপর থেকেই দেওয়া ২০ লক্ষ টাকা সন্দীপের কাছে ফেরত চান রূপাদেবী ও তাঁর স্বামী। অভিযোগ, সন্দীপবাবু প্রথম দিকে টাকা ফেরত দিয়ে দেবে বললেও পরবর্তীতে ধর্মদাসকেও বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকেন। এতেই মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন ধর্মদাস মন্ডল। রবিবার দুপুরে আচমকাই তিনি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
স্ত্রী রূপা মন্ডল তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের কাছে ধার করে এবং ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সন্দীপকে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা তাঁরা দিয়েছিলেন। সন্দীপ সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায় নিজের জমি বিক্রি করতে হয়েছে। আর তাতেই স্বামী ধর্মদাস মানসিক অবসাদে চলে যান। কোতুলপুর থানায় সন্দীপবাবুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান মৃত ধর্মদাস মন্ডলের ছেলে। আর তারপর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যায় অভিযুক্ত।