আমাদের ভারত, ২৬ অক্টোবর: “বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে” উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের এই মন্তব্যকে সমর্থন করে আগামী দিনে ব্যবহারিক জীবনে এর প্রয়োগের আহ্বান জানাল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস। বাংলাদেশের হিন্দুদের বিরুদ্ধে যে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চলছে সেই উদাহরণকে টেনে এনে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দিয়েছেন সংঘের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবোলে।
বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে। যদি আমরা বিভক্ত হই আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। আগস্ট মাসে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ একটি জনসভায় এই মন্তব্যটি করেছিলেন। আজ উত্তরপ্রদেশের মথুরায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বার্ষিক বৈঠক চলাকালীন প্রেস বিবৃতি দিতে গিয়ে সংঘের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবোলে এই মন্তব্যটির উল্লেখ করেন ও আজকের সময়ে হিন্দুদের জন্য এর প্রয়োজনীতার ব্যাখা দেন।
তিনি বলেন, এই মন্তব্যের প্রয়োগ ঘটিয়েই সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজ করতে হবে হিন্দুদের। নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজে তাদের নামতে হবে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা প্রতিরোধে, সামাজিক বিভাজনের বিরুদ্ধে, সুরক্ষার জন্য, সর্বোপরি জাতীয় ঐক্যের জন্য হিন্দুদের একতা থাকা খুব দরকার।
তিনি বলেন, ১৯৪৭- এ বিভাজনের কারণে বাংলাদেশের হিন্দুরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হন। আর আজ সেই কারণেই তারা হিংসার শিকার হচ্ছেন। তাঁর কথায়, সেদিনের বিভাজন আজকের হিংসার পটভূমি তৈরি করেছিল।
দত্তাত্রেয় হোসাবলে বলেছেন, হিন্দু ঐক্য সমাজে অপরিহার্য এবং জনকল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয়। জাতির স্বার্থে এটি অপরিহার্য। হিন্দু ঐক্যের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো সম্প্রদায়ের জন্যই ঐক্য অপরিহার্য। আজ অনেকেই তাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করছেন। তাঁর কথায়, জনকল্যাণের জন্য হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত। হিন্দুদের জাত পাত আদর্শ ইত্যাদি নানা ভিত্তিতে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আগ্রায় এক জনসমাবেশে বলেছিলেন, “আপনারা দেখতে পাচ্ছেন বাংলাদেশে কী হচ্ছে। এই ভুল আর কখনো হওয়া উচিত নয়। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আমরা সুরক্ষিত থাকবো এবং সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাব। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হই তবেই আমরা নিরাপদ হব।”
এদিকে হোসাবোলে বাংলাদেশের হিন্দুদের দেশ ছেড়ে না আসার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ জাতি হিসেবে ওই দেশের ইতিহাসে হিন্দুদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তাই হিন্দুদের উচিত সেখানে থাকা। তিনি বলেন, তাদের ভূমি ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে বিভক্ত হয়। ১৯৭১ সালে তারা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে পৃথক দেশে পরিণত হয়। তাতে ভারতের ভূমিকা ছিল। সেখানে একটি শক্তি পিঠ রয়েছে। ওই অঞ্চলটিতে হিন্দু জাতি হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কিন্তু হিন্দুরা সেখানে থাকলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে বলেও দাবি করেছেন দত্তাত্রেয় হোসাবোলে।
তিনি মনে করিয়েছেন, বিজয়া দশমীর দিন বক্তব্য রাখার সময় আরএসএস প্রধান বলেছিলেন যে, অসংগঠিত এবং দুর্বল হওয়া আসলে দুষ্টদের দ্বারা অত্যাচারকে আমন্ত্রণ জানানোর সমান।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান যুগে একতা বজায় রাখতেই হবে। বেশ কিছু জায়গায় ধর্মান্তকরণ হচ্ছে। গণেশ পূজা, দুর্গা পূজাতে হামলা হচ্ছে। এই ঘটনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে এবং তার জন্য একতা প্রয়োজন, আর তাতেই শান্তি বজায় থাকবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য ভারত সরকার পদক্ষেপ করেছে। পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় হিন্দুরা সমস্যায় পড়লে সাহায্যের জন্য ভারতের দিকেই তাকিয়ে থাকে।
লাভ জিহাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেয়েদের লাভ জিহাদ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। আমাদের মেয়েদের বাঁচানো আমাদের কাজ। কেরলের ২০০ মেয়েকে লাভ জিহাদ থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ মাধ্যমকে হোসাবোলে জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে সংঘের শাখা সংখ্যা আরো বেশি পরিমাণে বেড়েছে। বর্তমানে দেশজুড়ে সংঘের ৭২ হাজার ৩৫৪ টি শাখা চলছে।