সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৯ মার্চ: বিধানসভা নির্বাচন এখনও অনেক দূরে। অথচ ইতিমধ্যেই হিন্দুত্ব ইস্যুতে সরগরম বাঁকুড়া জেলা। আসন্ন নির্বাচনে হিন্দু ও হিন্দুত্ব ইস্যুই মুখ্য হয়ে উঠতে চলেছে বাঁকুড়ায় সে বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই, এমনই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলের।ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে শাসক দল তৃণমূল ও প্রধান বিরোধী দল বিজেপি দু’ পক্ষই যেন সম্মুখ সমরে।
বাঁকুড়া ১নং ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ও বিজেপিকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে দেওয়াল লিখন নিয়ে হৈ চৈ শুরু হতেই পাল্টা তৃণমূলের তরফে কটাক্ষ করে এবার ব্যানার পড়ল “হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই, বাঙালি পূর্ণ মন্ত্রী নাই।” স্থানীয় তৃণমূলের পক্ষে ব্যানার ও দেওয়াল লিখনে এই প্রচার চালানো হয়েছে। আগামী ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যে হিন্দুত্বকে সামনে রেখে লড়াইয়ের ময়দানে নামবে এই দেওয়াল লিখনে সেটা পরিষ্কার। জেলার ওয়াকিবহাল রাজনৈতিক মহলের মত, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দু ভোট এককাট্টা করতে কোনও চেষ্টাই বাকি রাখতে চায় না পদ্ম শিবির। এটা তারই প্রমাণ। এলাকার বিজেপির নেতা ও কর্মীরা দাবি করেছিলেন যে, রাজ্যে শাসক দল বিশেষ এক সম্প্রদায়কে তোষণ করে চলেছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে হিন্দুদের মধ্যে। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ দেখা যাবে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে।
এবার তৃণমূলের এই প্রচার ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। এই প্রচারকে বিজেপি স্বাগত জানিয়েছে।তাদের বক্তব্য, রাজ্যে বিজেপি জয়ী হলে বাঙালি পূর্ণ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী থাকবে।হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই হয়ে একজোট হওয়ার যে ডাক তৃণমূল দিয়েছে তাকে তারা স্বাগত জানাচ্ছে। তৃণমূলের বক্তব্য, গেরুয়া পরে হিন্দুত্বে প্রমাণ দিতে হয় না। তৃণমূল জাতপাত নিয়ে রাজনীতি করে না। এতে বিশ্বাসও নয়। তৃণমূলের ধর্ম উন্নয়ন।
এদিকে বাঁকুড়া ১নং ব্লকের বাসিন্দা বারিদ বরণ রায়, মাণিক ভট্টাচার্য, সবিতা কর্মকার মনে করেন, হিন্দু তুমি কার, তৃণমূল না বিজেপির এই প্রচার থেকে দূরে থাকা দরকার।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া ঝড়ে বাঁকুড়া জেলায় রীতিমতো চাপে পড়েছিল ঘাসফুল। লোকসভা নির্বাচন- ২০১৯ বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর দু’টি আসনেই এবং গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ১২টি আসনের মধ্যে ৮টিতে জয় পায় পদ্ম প্রার্থীরা। এতে বিজেপি কর্মী ও সমর্থকদের উৎসাহ ও শাসক দলের কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা যায়। কিন্তু, পরবর্তীতে নিজেদের সেই জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি।গত ২০২৪- এর লোকসভা নির্বাচনে পিছিয়ে পড়তে হয় বিজেপিকে। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া গেরুয়া শিবির।
অন্যদিকে শাসক দল তৃণমূলও এবার কোনো ভাবেই বিজেপিকে সেই সুযোগ ছাড়তে রাজি নয়। তাই প্রধান দুই প্রতিপক্ষ হিন্দু ও হিন্দুত্ব নিয়ে প্রচারে লড়াই এর ময়দানে নেমে পড়েছে।