বিশাল আকৃতির জিলাপি, ঐতিহ্য কেঞ্জাকুড়ার

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৭ সেপ্টেম্বর: বিশাল আকৃতির জিলাপি ঐতিহ্য কেঞ্জাকুড়া গ্ৰামের। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে বিশ্বকর্মা ও ভাদু পূজা উপলক্ষে কাঁসা- পিতল ও তাঁতের কুটির শিল্প সমৃদ্ধ বাঁকুড়ার এই গ্রামটি ব্যস্ত হয়ে ওঠে দানব জিলাপি বা জাম্বো জিলাপি তৈরিতে। এলাকার মিষ্টির দোকানগুলিতে কে কত বড় জিলাপি তৈরি করেছে ও কে কত পরিমাণ এই দানবাকার জিলাপি কিনেছেন যেন তার একটা অঘোষিত ও বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা চলে বাঁকুড়া জেলার কেঞ্জাকুড়া গ্রামে।

শতাব্দী প্রাচীন এই রীতি বজায় রয়েছে এখনও। সাধারণত জিলাপি মানেই আড়াই প্যাঁচ। কেঞ্জাকুড়ার জিলাপি আকৃতিতে একটা বড় গোল থালার সমান। বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে বাঁকুড়ার এই দানব জিলাপি দেখতে ও তার স্বাদ পেতে মানুষের ঢল নামে। সারা রাজ্যে এমনকি ভিন রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে এই জিলাপি। বাঁকুড়া জেলার কেঞ্জাকুড়া গ্রামের অলিতে গলিতে এই দানবাকৃতি জিলাপি ভাজায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী দোকানদারদের। কেঞ্জাকুড়া গ্রাম এই সময় বিশ্বকর্মা ও ভাদু পুজোয় হয়ে ওঠে “জিলাপি গ্রাম”-এ।

দ্বারকেশ্বর নদের তীরে অবস্থিত বাঁকুড়া – ১ নম্বর ব্লকের এই কেঞ্জাকুড়া বাসন শিল্প, তাঁত শিল্প সহ বিভিন্ন কুটির শিল্পে সমৃদ্ধ। সাথে সাথে জিলাপিও এই তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। বিশ্বকর্মা ও ভাদু পুজো উপলক্ষ্যে বিশাল এই জিলাপি কিনে আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতদের বাড়ি পাঠানোর চল রয়েছে। প্রতিবছর ভাদ্র মাসের ২৭ তারিখ থেকে আশ্বিন মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত এই বিশাল জিলাপি তৈরি পর্ব চলে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে এই জিলাপি ক্রয় করার জন্য দোকানে দোকানে ক্রেতাদের লাইন পড়ে যায়। এখানকার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী নিতাই দত্ত বলেন, এই জিলাপি বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে। এটা এখানকার একটা ঐতিহ্যবাহী প্রথা। কে কতো বড়ো জিলিপি বানাতে পারে তার একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা হয়। তবে একটা সময় দেড় থেকে দু’ফুট ব্যসার্ধের জিলাপি তৈরি হলেও ইদানিং তা ১ ফুট বা তার কিছু বেশি ব্যসার্ধের হয় না।

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নিতাইবাবু বলেন, এর জন্য বড়ো কড়াই, চুলো, ঝাঁঝরা সহ পরিকাঠামো যেমন অপ্রতূল তেমনি দক্ষ বা পটু কারিগররেও অভাব রয়েছে।তবুও এখানের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের মতে এই বিশালাকৃতি জিলাপি ভারতবর্ষ কেন পৃথিবীর আর কোনও দেশে তৈরি হয় না। এই মহা জিলাপির, জিআই স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *