Farmer, Bankura, সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতির অভাবে হতাশ বাঁকুড়ার চাষিরা, ঝঁকছেন আলুর বিকল্প সরিষা চাষে

আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৮ জানুয়ারি: আলু নিয়ে রাজ্য সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতি না থাকায় হতাশ বাঁকুড়ার চাষিরা আলুর বিকল্প সরষে চাষে মন দিয়েছেন। এই জেলায় আলু চাষ লাভজনক হলেও চাষিরা রয়েছেন দোটানায়। আশাহত অনেক চাষি আলু চাষ কমিয়ে সরিষা সহ অন্য ফসল চাষের কথা ভাবছেন। অযোধ্যা, আমরাল, লায়েকবাঁধ, পাঁচাল ও ভড়ার প্রভৃতি এলাকার চাষিদের এমনই বক্তব্য।

আলু চাষিদের বক্তব্য, আলু নিয়ে রাজ্য সরকার সুনির্দিষ্ট নীতি না নেওয়ায় একদিকে যেমন বছরের অধিকাংশ সময়ই চড়া দরে আলু কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছে, অন্যদিকে আলুর পাহাড় জমে থাকছে জেলার হিমঘরগুলিতে। ভিন রাজ্যে চাহিদা থাকা সত্বেও রপ্তানি করতে পারছেন না সরকারি নির্দেশে। এদিকে গত ডিসেম্বরের শুরু থেকেই নতুন আলু বাজারে চলে আসায় কমতে শুরু করে পুরানো আলুর দর ও চাহিদা। পুরনো আলুর দর ৩০ -৩৫ টাকা কিলো থেকে নেমে ২২ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খোলাবাজারে। চাষিদের কথায় পঞ্জাবের আলু সেভাবে আসে না বাঁকুড়ার বাজারগুলিতে। জেলায় এই আলুর চাহিদাও কম। তাই কিছুটা হলেও এটা তাদের কাছে স্বস্তির কারণ। তবে অন্য একটা সমস্যাও রয়েছে। রক্তে সুগার বাড়ার ভয়ে অনেকে আলু খাওয়া কমাচ্ছেন। এসবের মাঝে পড়ে তারা আলু চাষ নিয়ে দোটানায় রয়েছেন।

এ রাজ্যে সব থেকে বেশি চাষ হয় জ্যোতি আলু। এছাড়াও পোখরাজ, কে বাইশ ও চন্দ্রমুখী আলুর চাষ হয়।বাঁকুড়া জেলায় জ্যোতি, কে বাইশ ও পোখরাজ আলুর চাষ বেশি হয়। এ রাজ্যে কে বাইশ ও পোখরাজ আলুর তেমন চাহিদা নেই। তাই এই প্রজাতির বেশির ভাগ আলু রফতানি করা হয় পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ওড়িশা সহ বিভিন্ন রাজ্যে। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে সরকারি নির্দেশে এ রাজ্যে আলু রফতানি বন্ধ রয়েছে। এতে জেলার হিমঘরগুলিতে জমে যায় লক্ষ লক্ষ বস্তা আলু। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির হিসাবে বাঁকুড়া জেলায় জমে রয়েছে ৫ লক্ষ বস্তা আলু। এই জমে থাকা আলু নিয়েই চাষি ও সংরক্ষণকারীরা সঙ্কটে।

চাষি ও সংরক্ষণকারীদের বক্তব্য, গত বছর বাঁকুড়া সহ রাজ্যে আলুর উৎপাদন হয়েছে উল্লেখযোগ্য। সেই আলুর একটা বড় অংশই হিমঘরগুলিতে এখনও জমা রয়েছে। তারপরেও রাজ্যে আলুর ঘাটতির কারণ দেখিয়ে ভিন রাজ্যে আলু রফতানি বন্ধ করে রেখেছে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে মেয়াদ শেষ হলেও বাঁকুড়া জেলার হিমঘরগুলিতেই মজুত রয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ প্যাকেট আলু। চাষিদের বক্তব্য, রাজ্যে আলুর চড়া দর ধরে রাখায় প্রকৃতপক্ষে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এতে কালোবাজারি ও মজুতদারদের সুবিধা হচ্ছে।এখন পুরনো আলু হেলায় বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই।

এ প্রসঙ্গে ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, গত মরসুমে রাজ্যের প্রায় ৫০০ হিমঘরে ১২ কোটি ৫৫ লক্ষ ৪ হাজার ২৪৩ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল যা রাজ্যের চাহিদার তুলনায় অনেকটাই বেশি। অথচ সারা বছর রাজ্যের খোলাবাজারে আলুর দাম ছিল স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি। গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কিলো। ভিন রাজ্যে আলু রফতানি হওয়ায় রাজ্যের বাজারগুলিতে জোগান কমছে বলেই বাড়ছে দাম! সেই যুক্তি তুলে ভিন রাজ্যে আলু রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাজ্য সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করে আসছেন আলু সংরক্ষণকারী ও ব্যবসায়ীরা। আলুর দর নিয়ন্ত্রণ ও পরিস্থিতি মূল্যায়নে নামানো হয় টাস্ক ফোর্স। তারপরেও রপ্তানি নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত বদল হয়নি। এমনকি রাজ্যের বাজারগুলিতে কমেনি আলুর দাম। সেইকারণে আলুর চাষ কমিয়ে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন বাঁকুড়ার চাষিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *