আহত হয়েও বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাতির চেষ্টা রুখেছিলেন গৃহকর্ত্রী, ৪ দুষ্কৃতীর ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ৯ জানুয়ারি: নিজে গুরুতর আহত হয়েও বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাতির চেষ্টা রুখেছিলেন গৃহকর্ত্রী। তার চেষ্টাতেই ঘটনাস্থলেই ধরা পড়ে ২ জন দুষ্কৃতী, পালিয়ে যায় ২ জন। পরে তারাও ধরা পড়ে। ওই ৪ জন দুষ্কৃতীরই সশ্রম কারাদন্ডের নির্দেশ দিল আদালত।

২০০৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের ঘটনা। একটি বাড়িতে ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন পেশায় শিক্ষিকা মধুমিতা রায় চৌধুরী। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাইরে গিয়েছেন। বাড়িতে মধুমিতা আর পরিচারিকা ছাড়া আর কেউ ছিল না।

সন্ধে ৭.৪৫ নাগাদ হঠাৎই বাড়ির ডোরবেল বেজে ওঠে। পরিচারিকা দরজা খুলতেই জোর করে ঘরে ঢুকে আসে ৪ জন। হাতে রিভলবার, চপারের মতো ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র। ঘরে ঢুকেই দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয় তারা। পরিচারিকার মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়, বাধা দেওয়ার সামান্য চেষ্টা করলেই ‘খতম’ করে দেওয়া হবে।

একজনকে বাইরে পাহারায় রেখে অন্যান্য দুষ্কৃতীরা তখন ঘরের ভিতরে টাকা-গয়নাগাটি খুঁজতে ব্যস্ত। হঠাৎই পাহারায় থাকা দুষ্কৃতীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন মধুমিতা। এমন অপ্রত্যাশিত আক্রমণে বাধাই দিতে পারেনি সেই দুষ্কৃতী। তাকে জাপটে ধরে মধুমিতা চেঁচাতে থাকেন সাহায্য প্রার্থনা করে। শীতকাল, প্রায় সব বাড়িরই জানলা-দরজা বন্ধ। ফলে তাঁর চিৎকার শুনতে পাননি কেউই। নিজের সবটুকু জোর প্রয়োগ করে সেই দুষ্কৃতীকে জাপটে ধরেই মধুমিতা এগোতে থাকেন বাথরুমের দিকে। বাথরুমের জানলাটি খোলা। সেখান দিয়ে বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টায় সেই দুষ্কৃতীও তখন ক্রমাগত চপার দিয়ে আঘাত করে যাচ্ছে মধুমিতার নাকে। নাক দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে, তীব্র যন্ত্রণা—তারপরেও হাল ছাড়েননি মধুমিতা। অবশেষে তাঁর চিৎকার শুনতে পান কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। কী ঘটেছে বুঝতে পেরে, তারা দ্রুত ফোন করেন লেক থানায়।

অভিযোগ পেয়ে সামান্য সময়ও নষ্ট করেননি লেক থানার সাব ইনস্পেকটর অমিত দে সরকার। তাঁর নেতৃত্বে লেক থানার বিশেষ টিম পৌঁছে যায় মধুমিতার বাড়িতে। পুলিশ আসছে বুঝতে পেরে শেষ মুহূর্তে চম্পট দেয় দুই দুষ্কৃতী। কিন্তু বাকি দু’জনকে হাতেনাতে পাকড়াও করে লেক থানার বিশেষ টিম। উদ্ধার হয় রিভলবার, চপারের মতো অস্ত্রও।

আহত মধুমিতা রায় চৌধুরীর অবস্থা তখন বেশ সংকটজনক। তাঁকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। আর সামান্য দেরি হলেই প্রাণসংশয় হত মধুমিতার।

মুরশেদ মণ্ডল এবং হাসান মোল্লা— ধৃত দু’জনেই কুখ্যাত অপরাধী। জেরা শুরু হয়। তাদের বাকি দুই শাগরেদের খোঁজও চলতে থাকে। বারবার নিজেদের অবস্থান বদল করছিল পলাতক দু’জন। বেশ কয়েকবার তল্লাশি চালানোর পর অবশেষে ৩ মার্চ, গোপন ডেরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তৃতীয় চক্রী আব্দুল কালাম নস্করকে। ২৬ মার্চ লেক থানার তদন্তকারী টিমের হাতে ধরা পড়ে আবু জাফর লস্করও।

৪ জনের বিরুদ্ধেই একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়। উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ-সহ চার্জশিটও জমা দেওয়া হয় যথাসময়েই। সেই কেসেরই রায় বেরিয়েছে। ৪ জনেরই ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সঙ্গে মাথাপিছু ৫,০০০ টাকা জরিমানা। জরিমানা অনাদায়ে সশ্রম কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়বে ৬ মাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *