আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ১৪ অক্টোবর: পাঁচ দিন পর সন্তান সম্ভবা বধূর খুনের কিনারা করল বীরভূমের মল্লারপুর থানার পুলিশ। রবিবার তাকে বিহারের জামশেদপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার তাকে রামপুরহাট মহকুমার বিশেষ আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯ অক্টোবর সকালে মল্লারপুর থানার সাতবেরিয়া গ্রামের মাঠ থেকে এক সন্তান সম্ভবা মহিলার অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মহিলার পেট ফুরে বেরিয়ে আসে গর্ভস্থ শিশু। মহিলার শরীরের অধিকাংশ পুড়ে যাওয়ায় পরিচয় পেতে অসুবিধা হয় পুলিশের। তদন্তে নেমে একটি ডেলিভারি বয়ের বয়ান অনুযায়ী সিসিটিভি দেখে খুনের জাল গোটাতে শুরু করে পুলিশ। পুলিশ জানতে পারে একটি থর গাড়ি ৮ অক্টোবর রাত্রে মল্লারপুর থানার পাশ দিয়ে সাতবেরিয়ার দিকে যায়। গভীর রাতে ফের থানার পাশ দিয়ে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ওঠে। এরপর বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি সংগ্রহ করে পুলিশ গাড়ির কিনারা করে। জানতে পারে ওই গাড়ির মালিক রাহুল মণ্ডল। তার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের আদিত্যপুর থানার গামারিয়া গ্রামে। মৃত গৃহবধূর নাম প্রীতি পাণ্ডে। তার বাড়ি মালদা।
বছরখানেক আগে রাহুল দ্বিতীয় বিয়ে করে প্রীতিকে। বাড়ি জেনে যাওয়ার ভয়ে প্রীতিকে মালদায় বাড়ি ভাড়া করে রেখেছিল রাহুল। খুব ছোটতে প্রীতির মা- বাবা মারা যাওয়ায় সে দিল্লি গিয়ে বিউটি পার্লারে কাজ করত। সেখানেই মুন্নি রাম নামে এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয়। তার সঙ্গে দিল্লি থেকে মালদা চলে আসে প্রীতি। এদিকে মুন্নির নিকট আত্মীয়ের বাড়ি রাহুলের গ্রামে। সেই সূত্রে মুন্নির যাতায়াত ছিল। প্রীতিও সম্পর্কিত দিদি মুন্নির সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের আদিত্যপুর থানার গামারিয়া গ্রামে যেত। সেখানেই রাহুলের সঙ্গে পরিচয়। তারপরেই দ্বিতীয় বিয়ে। কিন্তু সন্তানসম্ভবা হয়ে যাওয়ায় প্রীতিকে খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্য পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মারা হয়। পেট্রোল কেনা হয়েছিল মালদা থেকে। মুন্নি তার বান্ধবী প্রীতির হাতের ট্যাটু এবং আঙ্গুলের রিং দেখে সনাক্ত করে।
রাহুলকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে ৮ অক্টোবর তারাপীঠ যাওয়ার নাম করে প্রীতিকে নিজের থর গাড়িতে তোলে। এরপর তারাপীঠে গাড়ির মধ্যেই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। সেখান থেকে আটলা গ্রামের ভিতর দিয়ে মল্লারপুরে পৌঁছোয় রাহুল। সাতবেরিয়া গ্রামের বাইরে মাঠের মধ্যে প্রীতিকে পোড়ায় রাহুল ও তার এক বন্ধু। ওই দিন রাতে এক ডেলিভারি বয় ফিরছিলেন মল্লারপুর। তিনি দেখেন মাঠের মধ্যে আগুন জ্বলছে। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে থর গাড়ি। তিনিই পুলিশকে খুনের কিনারা করতে অনেকটা সাহায্য করেন।
এদিন সাংবাদিকদের রাহুল জানায়, তার ভুল হয়ে গিয়েছে। তবে রাহুলের বন্ধুকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বন্ধুর খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।