দেশে প্রথম কিং ভালচার সংরক্ষণ কেন্দ্র হবে বক্সার রাজাভাতখাওয়াতে, রাজ্যজুড়ে শকুন গণনা ফেব্রুয়ারিতে

আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ৯ জানুয়ারি: বিলুপ্তপ্রায় “রেড-হেডেড ভালচার” বা “কিং ভালচার”- এর প্রজনন কেন্দ্র দেশের মধ্যে প্রথম তৈরী হতে চলেছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়াতে। ২০০৬ সাল থেকে রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রে হোয়াইট-ব্যাকড, স্লেন্ডার বিলড, লং বিলড-এর মত বিলুপ্ত প্রায় তিন প্রজাতির শকুনের সফল প্রজনন ও সংরক্ষণ করে গোটা দেশের সামনে নজির সৃষ্টি করেছে। সেই সাফল্যকে মাথায় রেখে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রে নতুন পালক জুড়তে চলেছে বলেই জানা গেছে। শনিবার দ্বিতীয় দফায় রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্র থেকে দুটি প্রজাতি মিলিয়ে মোট ৮টি শকুনকে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেবার পর এমনটাই জানালেন বনদফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিক থেকে বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির গবেষকরা। পাশাপাশি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যজুড়ে শকুন গণনার কাজ করা হবে বলে জানান বনাধিকারিক।

উল্লেখ্য, “কিং ভালচার” বা “রেড-হেডেড-ভালচার” শুধুমাত্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলেই দেখা যেত। আপাতত অতি বিপন্ন। মেরেকেটে মাত্র হাজার খানেক শকুনের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা তা নিয়েও শনিবার সন্ধেহ প্রকাশ করেছেন বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির প্রধান গবেষক বিভু প্রকাশ। এবার তাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে আগামী বছর থেকে শুরু হবে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাজতির শকুনদের সংরক্ষণ ও প্রজননের কাজ। গোটা প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি জড়িত। শনিবার পঞ্চম বক্সা বার্ড ফেস্টিভ্যালের শেষদিন রাজ্য বনদফতরের প্রধান মুখ্য বনপাল বরিকান্ত সিনহা, প্রধান মুখ্য বনপাল(বন্যপ্রাণ) বিনোদ কুমার যাদব, বিভু প্রকাশ “কিং ভালচার” নিয়ে ঘোষণাটি করার পাশাপাশি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি এও জানান, প্রায় ১৪ বছর পর ফের গোটা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে শকুন গণনার কাজ শুরু হবে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে।

বিভু প্রকাশ জানান, ”রেড-হেডেড শকুনদের সংরক্ষণ করা না হলে আগামী দশ বছর পর পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হতে পারে ওই বিশেষ ঝাড়ুদার পাখিরা। এরা কখনই পৃথিবীর আর পাঁচটি প্রজাতির শকুনের মত দলে থাকতে পছন্দ করে না। বরং একান্তে জোড়ায় জোড়ায় থাকে। অন্যন্য শকুনদের যেমন মাদি-পুরুষের তফাত করাটা খালি চোখে অসম্ভব, কিন্তু ‘কিং’ প্রজাতির শকুনদের মাদি-পুরুষদের সহজেই চিহ্নিত করা যায় দেহের আকৃতি ও রঙের প্রভেদে।” রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা দাবি করেছেন,”আমাদের ওই প্রকল্প চালু হলে শুধু দেশের মধ্যেই নয়, সারা পৃথিবীতে ‘রেড হেডেড’ শকুন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি নয়া দিগন্ত প্রতিষ্ঠিত হবে।” এদিকে, শনিবারই রাজভাতখাওয়া থেকে বার্ড ফেস্টিভ্যালের শেষ দিনে বিপন্ন প্রজাতির এক জোড়া ‘হোয়াইট ব্যাকড’ প্রজাতির শকুনকে ‘প্ল্যাটফর্ম ট্রান্সমিটার টার্মিনাল’ প্রতিস্থাপন করে প্রকৃতিতে উন্মুক্ত করা হয়েছে।তার সাথে ছয়টি হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুনকেও ছাড়া হয়েছে।

স্টেট ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ডের সদস্য অনিমেষ বোস জানান, “এক সময় আমরা শকুনকে ঘৃনার চোখে দেখতাম। তবে এখন আমরা সেই শকুনকেই আমন্ত্রন জানাচ্ছি। বিশ্বের সবথেকে দ্রুততম হারিয়ে যাওয়া একটা পাখি শকুন যাকে আমরা এখন সংরক্ষণ করছি। কারন শকুন বা এই ঝাড়ুদার পাখিটি না থাকলে আমাদের পরিবেশ ও সমাজে বিশাল সমস্যা পড়বে। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের রাজ্যে রাজাভাতখাওয়াতে শকুন প্রজনন কেন্দ্রটি খুব সাফল্যের সঙ্গে চলছে। যা থেকে আমরা শনিবার ৮টি শকুনকে দ্বিতীয় দফায় ছাড়তে পারলাম। আবার ফেব্রুয়ারি মাসে তৃতীয় দফায় শকুনদের ছাড়া হবে।”

বিভু প্রকাশের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, ইত্যিমধ্যে রাজাভাতখাওয়া শকুন পরজনন কেন্দ্রে ৭৬টি শকুনের বাচ্চার জন্ম হয়েছে। খুব শীঘ্রই রাজাভাতখাওয়াতে শকুনদের কৃত্রিম প্রজনন শুরু করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *