Kali Puja, ফলহারিণী কালীপুজো: দেবী আজ পূজক ও ভক্তের কর্মফল হরণ করে প্রদান করবেন পারমার্থিক ফল

কল্যাণ চক্রবর্তী, আমাদের ভারত, ৫ জুন: তেতো ফলের বিনিময়ে ফল মিষ্টি করে নেওয়ার কোনো পার্বণ কি আছে হিন্দু সমাজে? যাবতীয় কর্মফল বদলিয়ে সাধন-ফল পাবার পূজ্য দিন! হিন্দু বিশ্বাস, আরাধনার ফলস্বরূপ শ্রীশ্রী জগদম্বা আজকের দিনে আমাদের যাবতীয় পাপ হরণ করে নেন; বিনিময়ে আমাদের দেন চতুর্বর্গ ফল- ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। জ্যৈষ্ঠের অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিণী কালীরূপে দেবীকে তাই পূজার্চনার মহা-আয়োজন সম্পন্ন হচ্ছে দিকে দিকে। সাধনালয়ে, মন্দিরের গর্ভগৃহে, গৃহের উপযুক্ত পরিসরে আজ তাই পুণ্যপ্রবাহ। এদিন চারটি মরশুমি ফল অর্পণ করতে হয় দেবী বরণের ডালায়। তাতে দেশীয় ফলের অনুপম সৌকর্য, যেমন- আম, কাঁঠাল, কলা, নারকেল। ক্ষেত্র বিশেষে যেকোনো সুমিষ্ট দেশীয় ফল। কারণ জ্যৈষ্ঠ তো ফলেরই মাস।

কিন্তু যে কারণে এই তিথিটি আমাদের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো, তা হল, ভারতীয় নারীসমাজের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তির এক ঐশী প্রয়াসের প্রচেষ্টা।সুচিন্তিতভাবে সেটা করে দেখালেন পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণদেব, তাঁর দক্ষিণেশ্বর পর্বে। ১৮৭২ সালের এই পুণ্য তিথিতে সংগোপনে, গভীররাতে তিনি আপন সহধর্মিণী শ্রীসারদাদেবীকে আলিম্পনভূষিত একটি জলচৌকির উপর বসিয়ে ষোড়শোপচারে আদ্যাশক্তির দশমহাবিদ্যার অন্যতমা ষোড়শী রূপে পূর্ণতার দিব্যস্বরূপে পূজা করলেন। ভারতীয় সনাতনী নারীসমাজ নিয়ে বিদ্বজ্জনের আলোচনার প্রেক্ষিতে এ যে কত বড় ঘটনা, তা হয়তো এখনও উপলব্ধি করতে পারিনি আমরা৷ যে সমাজে, যে দেশে নারীর সম্মান নেই, ন্যূনতম শ্রদ্ধা-ভালোবাসা নেই, সেই সমাজ উপলব্ধি করতে পারবে না এই দিনটির গুরুত্ব।

পরমহংসদেবের কয়েকটি কাজ খ্রিস্টান-বিধর্মী শাসনের মাঝেই নিঃশব্দে অথচ সদর্পে ঘটিয়েছিল এক একটি বড় বিপ্লব। আর অন্যতম কাজ হল, পয়লা জানুয়ারির দিনটিতে খ্রিস্টীয় ক্যালেণ্ডারের পাতায় প্রথম দিনেই ‘বোল্ড আউট’ করে দিয়ে সনাতনী হিন্দুত্বের পরত মাখিয়ে দেওয়া। যার পরিচিতি ‘কল্পতরু দিবস’ হিসাবে। রক্তপাতহীন এই সমস্ত বিপ্লব এককথায় অতুলনীয়। যে সম্মান ভারতীয় নারীসমাজ প্রাচীনকালে পেয়েছে, গার্গী-মৈত্রেয়ী-অপালা প্রমুখ যে সমাজের মুখ্যমুখ, যা হারিয়ে গিয়েছিল বিদেশী শাসনে পর্দানসীন হয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার কারণে, সুযোগ পেয়ে সেই প্রাচীন অনুভবটিকে আবারও ফিরিয়ে আনলেন সেদিন শ্রীরামকৃষ্ণ। সম্মানে-সম্ভ্রমে নারীর মর্যাদা হল উচ্চে। বোঝা গেল বিধর্মের কারণে নারীকে লুকিয়ে রাখার বাধ্যবাধকতা এদিন থেকেই শেষ হচ্ছে। আগামী দিনে সেই নারীই তো হবেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সঙ্ঘ-জননী- শতরূপে সারদা। অতএব ১৮৭২ সালের ফলহারিণী কালীপুজোর দিন থেকে জয়রামবাটি গ্রামের রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে ‘সারু’ থেকে হলেন বিশ্বজননী সারদাদেবী, ভারতীয় সাধিকাশক্তির অন্যতম নাম৷ ফলহারিণী কালীপূজার ফল জগজ্জননী রূপে পেল ভারতীয় হিন্দু সমাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *