Tiger, Bankura, বাঁকুড়ার জঙ্গলের কি স্থায়ী বাসিন্দা হতে চাইছে বাঘ? খতিয়ে দেখছে বনদপ্তর

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৮ জানুয়ারি: বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মত নির্জন জঙ্গলেই স্থায়ী ভাবে থাকতে চাইছে বাঘ, না কী রয়েছে অন্য কোনো কারণ, তা খোঁজার চেষ্টা করছে বনদপ্তর। খাদ্য, নাকি অনুকূল নিরাপদ স্থায়ী ঠিকানার খোঁজে এরাজ্যে চলে আসা, এবিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিশেষ করে সম্প্রতি এরাজ্যের জঙ্গল মহলে একের পর এক বাঘ এসে হাজির। তাই এখনই বাঘকে বন্দি না করে শুধু মাত্র নজরদারির পরিকল্পনা বন দফতরের। বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া সহ এরাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে বাঘ ঢুকে এই জঙ্গল থেকে সেই জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। গত একমাসে তিন বার বাঘ ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার জঙ্গলে। তাই এটাকে হালকা করে দেখতে চাইছে না বন দপ্তর। দলমার হাতির মত এই জেলাগুলিতে বাঘেরও বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।

গত ২০১৮ সালে বাঁকুড়া জেলা থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড়ে ঢুকেছিল একটি বাঘ। স্থানীয় বাসিন্দারা নির্মম ভাবে মেরে ফেলে বাঘটিকে। সেই ঘটনার পর গত বছরের ডিসেম্বরে ফের জঙ্গলমহল এলাকায় বাঘ ঢুকে পড়ে। সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে পালিয়ে বাঘিনী জিনাত এই এলাকায় ঢুকে পড়ে। ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া জেলা ঘুরে বাঁকুড়ায় এসে পড়ে। গত ডিসেম্বরের শেষে বাঁকুড়ায় বন দফতরের হাতে ধরা পড়ে জিনাত। তারপরেও বাঘ এসেছে এই জেলাগুলিতে।

বন দফতরের বক্তব্য, মধ্যভারতে যে জঙ্গলে বাঘ বসবাস করে সেই একই ধরনের জঙ্গল রয়েছে ওই ৩ জেলার সীমানাবর্তী এলাকায়। জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ঝোরা। প্রচুর বুনো শুকর, হরিণসহ বিভিন্ন তৃণভোজী প্রাণীর বাস।কাজেই বাঘের খাদ্য ও পানীয় জলের কোনও অভাব নেই। জঙ্গল ঘন হওয়ায় নিরাপদে বসবাসেরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এই উপযুক্ত পরিবেশ বাঘকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে এই সব এলাকা। তাই ছুটে আসছে বাঘ পাকাপাকি ভাবে নিরাপদে থাকতে।

গত ডিসেম্বরে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে চলে আসে বাহিনী জিনাত। এই এলাকা ছেড়ে ফিরে যেতে নারাজ ছিল সে। বন দফতর ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে জিনাতকে ফেরত পাঠায় সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে। জিনাতের পর ঝাড়গ্রাম হয়ে পুরুলিয়ায় ঢোকে একটি বাঘ। এসব এলাকায় সে কয়েক দিন কাটিয়ে স্বেচ্ছায় ফিরে গিয়েছিল ঝাড়খণ্ডে। তারপর গত ৫ দিন ধরে বাঁকুড়ায় ঘাঁটি গেড়েছে আর একটি বাঘ। তাই এই অশনি সঙ্কেত খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা রয়েছে বন দফতরের।

রেডিও কলার না থাকায় নজরদারি চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তার ওপর মানুষের সাড়া পেলে বাঘ নিজের অবস্থান দ্রুত বদল করছে। গা ঢাকা দিচ্ছে গভীর জঙ্গলে। এতে নজরবন্দি রাখা হয়ে পড়ছে খুব কঠিন। এত সমস্যার মধ্যে একটাই সুখবর যে বাঘ এখনও পর্যন্ত বাঁকুড়ায় মানুষের কোনও ক্ষতি করেনি। লোকালয়েও হানা দেয়নি। তাই বন দফতর স্হানীয় অধিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এবার বাঘকে বন্দি না করে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে চাইছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *