আমাদের ভারত, ৫ জানুয়ারি: তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দলনেত্রীর স্তুতি করতে গিয়ে তাঁর জন্মদিনে যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্তুতি করতে গিয়ে একেবারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। আর তাতেই তাকে তুলোধনা করেছেন সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কথায় মারাত্মক স্পর্ধা দেখিয়েছেন কুণাল। ঔদ্ধত্যের সীমা অতিক্রম করেছেন তিনি।
এর আগে সারদা, নাইটিঙ্গেলের সঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করা হয়েছিল। কিন্তু এবার একেবারে তুলনা করা হলো নেতাজির সঙ্গে। আর তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সুকান্ত। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, “কী ভীষণ স্পর্ধা! ঔদ্ধত্য এবং রাজনৈতিক অশিক্ষা ঠিক কোন স্তরে গিয়ে পৌঁছালে কোনও ব্যক্তি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ব্যর্থতা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করার দুঃসাহস দেখাতে পারেন! রাজ্যের অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রীর পদলেহন করতে গিয়ে প্রলাপের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মূল সেনানী, আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা প্রণম্য ‘নেতাজি’ সম্পর্কে এই ধরনের চরম আপত্তিকর মন্তব্য করতেও ন্যূনতম লজ্জাবোধ হচ্ছে না তাঁর। তিনি যেমন নির্লজ্জতার সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছেন, ঠিক তেমন ভাবেই তাঁর দলের অনুগামীরা যাঁরা এই লজ্জাজনক মন্তব্যকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন, তাঁরাও একইভাবে রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্কস্বরূপ। ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির অন্যায় স্বার্থ চরিতার্থ করতে অবাধে পশ্চিমবঙ্গে মৌলবাদী ইসলামীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু এবার রাষ্ট্রের গর্ব নেতাজিকেও অসম্মান করল তৃণমূল। ধিক্কার!
প্রসঙ্গত, উত্তর কলকাতায় সোমেন মিত্রের মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠানে এসে প্রদীপ ভট্টাচার্য অতীতকে টেনে এনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে সওয়াল করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহিষ্কারের প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে কংগ্রেসকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর এই মন্তব্য সম্পর্কে কুণাল ঘোষ বলেন, প্রদীপ দা একটা দলে আছেন। তিনি হয়তো তাঁর কম্পালশন থেকে বলেছেন, কিন্তু তাঁর মনের মধ্যে যেটা আছে সেটা তো বাস্তব। কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই- এর স্পিরিটকে মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আজও মানুষ কংগ্রেস থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে পারেনি, কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি কুণাল। তারপরেই সরাসরি দেশ নায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। আর তাতেই উত্তাল হয়েছে রাজ্য রাজনীতি।
তিনি বলেছেন, কংগ্রেসের রাজনীতির দিকে যদি দেখেন, খুব সত্যি কথা বলতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আলাদা দল করে দলীয় রাজনীতিতে সফল হতে পারেননি। তিনি ঐতিহাসিক বিপ্লবী সংসদীয় রাজনীতিতে দল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অপ্রিয় সত্যি যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কিন্তু আলাদা দল নিয়ে দলীয় রাজনীতিতে সফল হতে পারেননি। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র সফল।
শুধু এটিই নয়, আরো কিছু কথা বলেছেন কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মর্যাদা দিয়েছেন, তিনি নতুন দল প্রতিষ্ঠা করে লড়াই করেছেন। মানুষ স্বীকৃতি দিয়েছে। সংসদীয় রাজনীতিতে দল গড়ে ব্যর্থ হয়েছে নেতাজি। সেখানে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র সফল যিনি দল প্রতিষ্ঠা করে বাম জমানার পতন ঘটিয়েছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় দল করে ব্যর্থ হয়েছেন, সুতরাং বাংলার মাটিতে যদি আলাদা দল করে কেউ সফল হয়ে থাকে তাহলে তিনি একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।