আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ২ জুলাই: পুলিশ ও শ্যালকদের হাতে খুন হলেন এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। এমনই অভিযোগে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বীরভূমের মল্লারপুরের মাঠমহুলা গ্রামের নাপিতপাড়ায়। মৃতের আত্মীয়দের দাবি, পুলিশ এবং শ্যালকরা খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে ওই ব্যক্তিকে। মৃত ব্যক্তির নাম প্রশান্ত ভাণ্ডারী (৫৮)। বছর সাতেক আগে সাপের কামড়ে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। বছর সাতেক আগে নলহাটি থানার তেজহাটি গ্রামের পার্বতী দাসকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন প্রশান্ত।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি লেগেই ছিল। গতকাল রাত থেকে সেই অশান্তি বেড়ে যায়। এর পরেই বুধবার বেলার দিকে পার্বতীর দুই ভাইয়ের একজন অসিত দাস সিভিক পুলিশ, অন্যজন অসীম দাস কনস্টবল। তারা মল্লারপুর থানার পুলিশ নিয়ে মাঠমহুলা গ্রামে যায়। অভিযোগ, মল্লারপুর থানার পুলিশ এবং মৃতের শ্যালকরা আত্মীয়দের মারধর করে ঘর থেকে বের করে দিয়ে প্রশান্তকে প্রচণ্ড মারধর করে গোয়াল ঘরে ঝুলিয়ে দেয়। ঘরের আলমারি খুলে সমস্ত সোনার গয়না, টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপরেই পরিবারের লোকজন গিয়ে দেখে প্রশান্ত ভাণ্ডারী গোয়াল ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে। এই ঘটনায় গ্রামে উত্তেজনা ছড়ায়। খবর লেখা পর্যন্ত মৃতদেহ বাড়িতে রেখেই বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসী এবং আত্মীয়রা। তাদের দাবি, মল্লারপুর থানার পুলিশ এবং প্রশান্তর শ্যালকদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
মৃত প্রশান্ত ভাণ্ডারীর ভাইপো অমিত ভাণ্ডারী বলেন, “মঙ্গলবার থেকে কাকা কাকিমার মধ্যে অশান্তি চলছিল। মঙ্গলবার সকালে কাকিমার দাদা ও ভাই মল্লারপুর থানার পুলিশ নিয়ে বাড়িতে আসে। পুলিশ ও কাকার শ্যালকরা কাকাকে প্রচণ্ড মারধর করে। আমার বাবা- মা ছাড়াতে গেলে পুলিশ তাদের গলাধাক্কা এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে ঘর থেকে বের করে দেয়। গ্রামবাসীদেরও গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে পুলিশ তাড়িয়ে দেয়। এরপর ঘরের ভিতর দরজা বন্ধ করে কাকাকে মারধর করে। পুলিশ চরম মেরেছে। সারা শরীরে মারধরের দাগ রয়েছে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর আমরা কাকাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। আমরা পুলিশ ও কাকিমার দাদা ও ভাইদের কঠোর শাস্তি চাই।”
প্রশান্তর প্রথম পক্ষের ছেলে রজত ভাণ্ডারী বলেন, “বাবা মায়ের মধ্যে অশান্তি চলছিল। এরপর মা তাদের ভাইদের ডেকে পাঠায়। তাঁরা মল্লারপুর থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে এসে বাবাকে মারধর করে। গ্রামের মানুষদের পুলিশ তাড়িয়ে দিয়ে ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে বাবাকে মারে। বাবার মৃত্যুর জন্য পুলিশ এবং দ্বিতীয় পক্ষের মায়ের দাদা ও ভাইরা দায়ী। অবিলম্বে ওদের শাস্তি চাই।”
মৃত প্রশান্তর বোন বাসন্তী প্রামাণিক বলেন, “এই নিয়ে তিনবার থানা পুলিশ হল। পুলিশ ধরে নিয়ে যেত, আর আমার দাদা ছাড়িয়ে নিয়ে আসত। কিন্তু এবার তারা ঘরের মধ্যে ভাইকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে। বাড়িতে থাকা সমস্ত সোনার গয়না, টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েছে। আমরা মল্লারপুর থানার পুলিশ এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর দাদা ও ভাইদের শাস্তি চাই।”
এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। ম্যাসেজের উত্তর দেননি।