‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে দ্বিমত সামাজিক মাধ্যমে

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ১৬ মার্চ: দ্য কাশ্মীর ফাইলাস’-এর সাফল্য নিয়ে দ্বিমত নেটানাগরিকরা। সামাজিক মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে সওয়াল।

সাংবাদিক সঞ্জয় পাত্র লিখেছেন, “দ্য কাশ্মীর ফাইলাস–ভামেদের খুব কষ্ট হচ্ছে। আহা সোনা গো আমার। এই ধরনের নেমকহারাম দল পৃথিবীতে আর আছে কি না তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।” দু’ঘন্টায় আটটি মন্তব্য এসেছে।

প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রকাশ রায় লিখেছেন, “ওরা সত্যকে মেনে নিতে ভয় পায়।” তাপস দাস লিখেছেন, “চাড্ডিদের এতে আবার ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
সাংবাদিক বীরেশ্বর বেরা লিখেছেন, “ছবিটা দেখব ভাবছিলাম। গেরুয়া শিবির এত উচ্ছ্বসিত দেখে বুঝলাম, এতে সত্য বিকৃতই করা হয়েছে নিশ্চয়ই…তাই দেখার ইচ্ছে চলে গেল।” জবাবে সঞ্জয় পাত্র লিখেছেন, “ভাম শিবিরের এত আপত্তি মানেই এই ছবিতে নিশ্চয় সত্যি তুলে ধরা হয়েছে। তাই ছবিটা অবশ্যই দেখতে হবে দাদা।”

প্রীতিশ ব্যানার্জি লিখেছেন, “সত্যের বিকৃতি হয়েছে কিনা জানি না। কিছু মানুষের বিকৃত চিন্তা ভাবনার বিকাশ হলো কিনা সেটা দেখার বিষয়। পিকে সিনেমাটা বিকৃত মানসিকতা বলে মনে হয়নি। নিজের ধর্মের প্রতি দুর্বলতাকে মানসিক বিকৃতি যারা বলে তাদেরকেও ক্ষমা করেই আজ এই অবস্থা।”

পৃথক পোস্টে কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডিজি দীপঙ্কর সিংহ লিখেছেন, “আমি দেখিনি, তবে মিডিয়ার এই অতি সক্রিয় প্রচারই বুঝিয়ে দিচ্ছে কাশ্মীর নিয়ে এই ছবিতে বিষ ঢেলেছে বিভ্রান্ত করার জন্য। ঐ বিষ গেলার ইচ্ছা আমার নেই।” প্রতিক্রিয়ায় রেখা সরকার লিখেছেন, “জম্মু-কাশ্মীরে হিন্দুদের উপর যেভাবে অত্যাচার হয়েছে মুসলমানরা যেভাবে জুলুম করেছে আপনি দেখলে আপনার চোখের জল বেরিয়ে যাবে।”

জবাবে দীপঙ্কর সিংহ লিখেছেন, “সাড়া ভারত জুড়ে রাষ্ট্রশক্তির জুলুম দেখছি। গুজরাট দেখেছি। চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে। খুনীর নামে জয়ধ্বনি দেখছি গেরুয়াধারীদের। ইউপি-র লখিমপুরে কৃষকদের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে মারতে দেখেছি। এঁরা মুসলিম ছিল না। আর মুসলিম হলেই ‘দেশদ্রোহী’ তকমা লাগাতে হবে? সেদিন যারা বিভিন্ন রাজ্যে অপছন্দের সিনেমা বন্ধের জন্য অভিনেতা অভিনেত্রীদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছে, মুখে কালি মাখিয়ে দিয়েছে প্রকাশ্য দিনের আলোয়, সিনেমার স্ক্রীন ছিঁড়ে দিয়েছে, বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ফিদা হুসেইন কে আক্রমণ করেছে, শিল্পী যতীন দাশের প্রদর্শনী ছিঁড়ে ভন্ডুল করেছে, তাঁদের কাছে ‘জুলুমের চিত্রায়ন’ দেখবো? আমি হিন্দু-মুসলিম ভাগ করে জুলুম দেখিনা। তিন বছরে ইউপিতে ৬৪৭৬ টি পুলিশ এঙ্কাউন্টারে অন্তত ১২৫ জন মারা গিয়েছে। লোকসভায় সরকার গত ফেব্রুয়ারি মাসে জানিয়েছে সারাদেশে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তিন বছরে পুলিশ হেফাজতে মারা হয়েছে ৩৪৮ জনকে, আর এঙ্কাউন্টারে মারা হয়েছে ৩৫০ জনকে। কোন দেশে আমরা আছি? কাশ্মিরে আটবছরের শিশু কন্যা আসিফা বানো কে ধর্ষণ করে খুন করলে যেমন ক্ষোভ হয়, কোন জঙ্গি অন্য মানুষ হত্যা করলেও তেমনি ক্ষোভ হয়। যখন রাষ্ট্র এই বিভাজনের খেলা বন্ধ করবে, তখন রাষ্ট্রের কথা শুনবো। তার আগে ধিক্কার দেবো এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খেলাকে।”

প্রসঙ্গত, মুক্তির সময় থেকেই বিতর্কের শীর্ষে বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’। ১১ মার্চ সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই ক্রমাগত দর্শকদের প্রশংসা ও একাধারে সমালোচনা কুড়িয়ে নিচ্ছে এই ছবি। বক্স অফিসে অসাধারণভাবে পারফর্মও করছে বিতর্কিত। যদিও ছবিটিতে অনুপম খের এবং মিঠুন চক্রবর্তীর মতো বড় নাম রয়েছে, তবুও এই ছবির প্রচারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন পরিচালক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *