পারুল খামারিয়া, আমাদের ভারত, নদিয়া, ১৫ নভেম্বর: আজ শেষ হল ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর নগর সংকীর্তন। গত একমাস ধরে নদিয়া জেলার বীরনগরের জয়পুর গ্রামে নগর সংকীর্তন করেন এই গ্রামের অধিবাসীবৃন্দ। তারপর আজ ‘মহোৎসব’-এর আয়োজন করা হয়। ভক্তরা সবাই প্রসাদ পান।
গত বছর থেকে শুরু হয়েছে দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির-এর নগর সংকীর্তন যাত্রা। এবছরও আশ্বিন মাসের শুক্লা একাদশী(২৭ শে আশ্বিন) থেকে শুরু হয় নগর সংকীর্তন। প্রতিদিন ভোর বেলায় উঠে গ্রামে হরিনাম সংকীর্তন করেন তারা। দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির-এর কালী মন্দির থেকে শুরু হয় এই যাত্রা। সমগ্র গ্রাম পরিক্রমা করে তারা আবার মন্দিরে ফিরে আসেন। এই ভাবে একমাস ধরে তারা হরিনাম সংকীর্তন করেছেন দ্বারে দ্বারে ফিরে। গতকাল হয়েছে ‘অধিবাস’ ও কীর্তন গান। আজও সারাদিন কীর্তন করা হয়।
এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় নগর পরিক্রমা। তিনটি বিভাগে ভাগ ক’রে গ্রামের শিশুদের গৌর-নিতাই সাজিয়ে প্রতিটি মানুষের বাড়িতে নগর সংকীর্তন নিয়ে যান গ্রামবাসীরা। গৃহস্থেরা সেই গৌর-নিতাই এর পা ধুইয়ে তাদের প্রণাম করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গৌর-নিতাই তাদের বাড়িতে এসেছেন দেখে ভীষণ আনন্দিত হন তারা। তারপর কীর্তনের দলের হাতে গৃহস্থেরা চাল ও অর্থ তুলে দেন সাধ্যমতো। এই ভিক্ষালব্ধ চাল দিয়ে আজ মহোৎসবের আয়োজন করা হয়। এদিন প্রায় ৭০০ গ্রামবাসীরা প্রসাদ পান- ভাত, ডাল, তরকারি ও পায়েস।
এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক নীলা মোদক বলেন, “আমরা গ্রামবাসীদের মধ্যে সঠিক ভাবে ধর্মাচরণের বার্তা দিতে চাই। যেভাবে অপসংস্কৃতি চারিদিকে দেখতে পাচ্ছি, তা দেখে খারাপ লাগছে। যুব সমাজ ভুল পথে যাচ্ছে। আমরা চাই আমাদের পরিবারের ছেলে-মেয়েরা যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা পেয়ে নিজেদের সেই ভাবে গড়ে তুলুক।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ উদ্যোক্তা মোহন্ত শর্মা বলেন, “আমরা এক মাস ধরে হরিনাম সংকীর্তন করেছি। মুসলিম আমলে এই হরিনাম সংকীর্তনে বাধা দিয়েছিলেন নবদ্বীপের কাজী। তার বিরুদ্ধে গিয়ে শ্রীচৈতন্যদেব হরিনাম সংকীর্তন করেছিলেন। আজ আমাদের পশ্চিমবঙ্গে সনাতনীদের দুর্গাপুজো ও কালী পুজোতে মূর্তি ভাঙ্গা হচ্ছে দেখে আমরা অত্যন্ত বিচলিত। আবার কি মুসলিম শাসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না নাকি আমাদের পশ্চিমবঙ্গ? সনাতনীদের ঘুম ভাঙাতেই আমাদের এই নগর সংকীর্তন।”
দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মিলন খামারিয়া জানান, “দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির বিভিন্ন সামাজিক কাজ করছে, ধর্ম জাগরণ তার মধ্যে অন্যতম। আমরা চাই সনাতনীরা নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করুক। নিজেরা সংঘবদ্ধ হোক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে নিজের ধর্ম জেনে পালন করতে পারে এবং নিজের ধর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। ধর্ম বাঁচলে তারাও বাঁচবে। শাস্ত্রে আছে, ধর্মকে যে রক্ষা করে, ধর্মও তাকে রক্ষা করে।”
এই অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন ড: কল্যাণ চক্রবর্তী। নগর সংকীর্তনের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মিন্টু শর্মা, প্রফুল্ল খামারিয়া, জীবন বিশ্বাস, প্রিয়া মোদক ও ঊর্মিলা খামারিয়া।