পারুল খামারিয়া, আমাদের ভারত, বারাসত, ১১ জানুয়ারি: উত্তর চব্বিশ পরগণার বীরা, দত্তপুকুরে অবস্থিত ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অনাথ আশ্রমে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার সুযোগ পেয়েছে পনেরো জন জনজাতি পরিবারের দুঃস্থ ছাত্র। তারা রাজ্যের নানান জায়গা থেকে প্রেরিত হয়ে ঠাঁই পেয়েছে এই আশ্রমিক পরিবেশে, প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে বসবাস করার আনন্দে, ব্রহ্মচর্যার আলোকে প্রতিপালিত হতে।
এদিন সেই আশ্রমেই স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনের প্রাক্কালে বিবেকানন্দের দেখানো ‘শিব জ্ঞানে জীব সেবা’র আদর্শকে গ্রহণ ক’রে আশ্রম ছাত্রদের জন্য সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে এবং প্রত্যেককে একটি করে কম্বল দান করতে কল্যাণ মন্দিরের তরফে আশ্রমে উপস্থিত হন শিক্ষাবিদ মিলন খামারিয়া এবং প্রকৌশলী শোভন ব্যানার্জি। তাদের আন্তরিকতায় ও স্নেহের পরশ পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে আশ্রম বালকেরা।
শুরু হয় ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর সঙ্গে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের এই শাখায় ছাত্র উন্নয়নের সংক্রান্ত একটা পরিকল্পনা ‘কেরিয়ার কাউন্সেলিং’। কোন ছাত্রের কী বিষয়ে আগ্রহ ও মুন্সিয়ানা আছে, সুপ্ত প্রতিভা কী, তা গোড়ার পর্বে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করে, তাকে সেই মতো এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে কল্যাণ মন্দির। আশ্রম অধ্যক্ষ স্বামী শোভনানন্দজী মহারাজ এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। দেশের মাটি গোষ্ঠী সকল স্বেচ্ছাসেবীদের অনুরোধ করেছেন, তারাও যেন নিজ নিজ কর্ম পরিসরে দীর্ঘমেয়াদী কেরিয়ার কাউন্সেলিং-এর ধারণা বজায় রেখে গরিব ও অনাথ ছাত্রদের পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনার জন্য এগিয়ে আসেন এবং তাদের পাশে থেকে আর্থিক সহযোগিতা করেন।
এদিন শোভন ব্যানার্জি এই কাজে কম্বল দান করেন এবং অধ্যাপিকা মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায় অনাথ ছাত্রদের ভালোমন্দ খাওয়ার ব্যাপারে আর্থিক সহযোগিতা করেন।
এই ছাত্রদের বাগান পরিচর্যার পাঠ শেখাতে গত বছর আশ্রমে উপস্থিত হয়েছিলেন দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির-এর অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক ড: কল্যাণ চক্রবর্তী। তিনি আশ্রমাধ্যক্ষের অনুমতিতে এবং সাহচর্যে আশ্রমিকদের সঙ্গে পড়াশোনার ব্যাপারে কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন যে, জনজাতি ছাত্রদের পরবর্তী জীবনে নিজ নিজ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তাদের উপযুক্তভাবে পাঠ্য বিষয়ক, প্রকৃতি বিষয়ক এবং জীবনচর্যা বিষয়ক ধারাবাহিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের আবহে ছোটোবেলা থেকেই ধীরে ধীরে বড় করে তুলতে হবে। তারজন্য করতে হবে ‘কিউমুলেটিভ কেরিয়ার কাউন্সেলিং’, তারজন্য আশ্রমে মাঝে-মধ্যে উপস্থিত থাকতে হবে নানান বিষয়ে প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদবৃন্দকে। ড: চক্রবর্তী এরই মধ্যে আশ্রমের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত জাতের ফলগাছের চারা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করেন। ব্যবস্থা করেন প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের।
আজকের এই সেবাকাজ নিয়ে দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির-এর প্রতিষ্ঠিতা সদস্য মিলন খামারিয়া জানান, এই প্রচন্ড শীতে শিশুরা কষ্টে আছে জেনে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানাই। তাতে সাড়া দিয়ে যারা সেবাকাজে সাহায্য করলেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। মানব সেবাই আমাদের পরম ধর্ম। আসুন আমরা সবাই মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াই। দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির এই ব্রত নিয়েই এগিয়ে চলেছে।