Modi, BJP, “দলিত আদিবাসীরা তৃণমূলের দাস নয়”, বালুরঘাটের সভা থেকে আদিবাসী ইস্যুতে সরব মোদী

আমাদের ভারত, ১৬ এপ্রিল: রামনবমীর আগের দিন বালুরঘাটের প্রার্থী সুকান্ত মজুমদারের হয়ে প্রচারে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহৎ সংখ্যায় আদিবাসী ভোটার থাকা বালুরঘাটে প্রচারে এসে তাই সবথেকে বেশি কথা আদিবাসী সম্প্রদায়কে নিয়েই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ১৫ শতাংশ আদিবাসী ভোট রয়েছে বালুরঘাটে। ২৭ শতাংশ তপশিলি জাতির ভোট রয়েছে। তাই সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তাঁর কেন্দ্রে মোদীর সভা সঞ্চালনার দায়িত্ব দেন ওই দুই সম্প্রদায়ের দুই প্রতিনিধিকেই। বালুরঘাটের পর তিনি রায়গঞ্জে সভা করেন।

মোদীও বক্তব্যের শুরু থেকে স্থানীয় আবেগকে ছুঁয়ে যান। রামনবমীর কথা যেমন বলেন, তেমন দক্ষিণ দিনাজপুরে স্থানীয় দেবী বল্লা কালীর নাম উল্লেখ করেন মোদী। এরপর বিজেপির ইশতেহারে দলিত, আদিবাসীদের জন্য বিজেপির ভাবনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে আদিবাসী ইস্যুতে আক্রমণ শানান তৃণমূলকে। সরাসরি তৃণমূলকে আদিবাসী বিরোধী বলেই দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দলিত, আদিবাসী, বঞ্চিতরা তৃণমূলের দাস নয়। আদিবাসী মহিলাদের নিচু করে দেখানোয় তৃণমূল নিজেরাই নিচু হয়ে যাবে।”

এর আগে রামনবমীর দিনকে সংঘর্ষের দিন বলে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই আজ বাংলায় এসেই তার পাল্টা জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেন, আদালতের অনুমতি নিয়ে রামনবমী হচ্ছে। ওরা রামনবমী আটকানোর জন্য বহু ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু জয় সত্যেরই হয়েছে। এই কারণেই আদালত থেকে অনুমতি পাওয়া গেছে। আগামীকাল রামনবমী শোভাযাত্রা বেরবে।

হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী বালুরঘাটে আসেন। আকাশ থেকে বালুরঘাটের জমায়েত দেখেছেন তিনি। ফলে সেই অভিজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় ভাগ করে নেন। মোদী বলেন, “হেলিকপ্টার থেকে নামার সময় দেখেছি চতুর্দিকে শুধু মানুষ। মা-বোনেদের আশীর্বাদ বলছে বাংলায় উন্নয়নের জয় হবে। ৪ জুন ৪০০ পার হবেই।

এরপরই বিজেপির ইস্তেহারের প্রসঙ্গ তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুদিন আগে পয়েলা বৈশাখ গেছে। ওই দিনই আমাদের সংকল্পপত্র প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে মোদী আগামী পাঁচ বছরের গ্যারান্টি দিয়েছে। গরিবদের জন্য তিন কোটি নতুন বাড়ি, বিনামূল্যে বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল যাতে বিদ্যুতের বিল জিরো হয়ে যাবে, ফ্রিতে রেশন দেওয়া হবে আগামী পাঁচ বছরে। এই সমস্ত কিছু মোদীর গ্যারান্টি। এর ফলে বাংলার গরিব, দলিত, আদিবাসী মহিলাদের কল্যাণ হবে বলে দাবি করেন মোদী।

এরপরই তিনি আদিবাসীদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দাবি করেন, বিজেপি আদিবাসী, দলিতদের সম্মানের জন্য লড়াই করছে। বিজেপি সরকার জনজাতি গৌরব দিবস পালন করে। আদিবাসী বাচ্চাদের জন্য আট লক্ষ একলব্য আবাসিক বিদ্যালয় খুলেছে। বিজেপিই প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতিকে বানিয়েছে। অথচ এই বালুরঘাটের তিন আদিবাসী মহিলা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিল সেই অভিযোগে তৃণমূলের লোক নাকক্ষত দিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছে। দলিত আদিবাসীরা নিজের মর্জির মালিক কি হতে পারে না? প্রশ্ন তুলে অভিযোগের সুরে মোদী বলেন, বাম ও তৃণমূল সরকার সীমান্তবর্তী এলাকায় যেখানে আদিবাসী বেশি সেই সব জায়গাকে ইচ্ছে করে উন্নয়নের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। ভালো হাসপাতাল কিংবা কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে দেয়নি। এখানকার যুবকদের কাজের খোঁজে বাইরে যেতে হয়। তাঁর দাবি, বিজেপি বালুরঘাট ও পশ্চিমবঙ্গের বিকাশের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। বালুরঘাট স্টেশন অমৃত ভারত স্টেশন হিসেবে বিকশিত হয়েছে। একাধিক নতুন ট্রেন শুরু করেছে। বালুরঘাট এয়ারপোর্টের জন্য চেষ্টা চলছে। কিন্তু তৃণমূল সরকারের ইচ্ছে নেই যে এখানে বিমানবন্দর হোক।

বালুরঘাটের সভা থেকে সন্দেশখালি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, বিশ্বকর্মা যোজনা, সিএএ-র মত ইস্যু তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তবে বালুরঘাটের প্রচারে মূল লক্ষ্য ছিল আদিবাসী সমাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *