পারুল খামারিয়া, আমাদের ভারত, কলকাতা, ৮ জানুয়ারি: প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগে পদার্পণ করেও নারীরা আজও দিকে দিকে লাঞ্চিত হচ্ছে; কখনো ঘরে, কখনো বাইরে। পুরুষ শাসিত সমাজে এখনো মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার করা হয়। অথচ নারীই সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখে বিভিন্ন ভাবে। বিশ্বের সব কল্যাণের পেছনে নারীর অবদান আছে।
সেই নারীদের সম্মান জানাতেই ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক ও উত্তরাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের সহযোগিতায় গত ১লা জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে নাট্যোৎসব। আগামীকাল ৮ জানুয়ারি শেষ হবে এই উৎসব।
‘দলছুট মানিকতলা’ নাট্যচর্চা কেন্দ্র প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজন করেছে ‘জাতীয় উদীয়মান নারীর মঞ্চ নাট্য সমারোহ’। নেপাল, এলাহাবাদ, জামশেদপুর, রাজস্থান ছাড়া ছিল পশ্চিমবঙ্গের ১৪টি মহিলা পরিচালিত নাট্যদল। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এই উৎসবে যোগদান করেছে নাট্যদলগুলি। ‘দলছুট মানিকতলা’ নাট্য চর্চাকেন্দ্রের আয়োজনে কলকাতার কালীঘাটের ‘মুক্ত অঙ্গন রঙ্গালয় প্রেক্ষাগৃহ’ এ এই উৎসব চলছে। এই নাট্যোৎসবে এবারের বিষয় – বিশ্ব নারীদের সম্মান জানানো।
এই উৎসবের উদ্বোধনের দিন উপস্থিত ছিলেন ‘সংস্কার ভারতী’র কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদিকা নীলাঞ্জন রায়, EZCC-এর ADO ড: অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়; আজ উপস্থিত ছিলেন সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ (দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)-এর সাহিত্য বিধা প্রমুখ মিলন খামারিয়া ও আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এই নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ নাটকগুলির মধ্যে অন্যতম হল বলাই, অগ্নি পুষ্প, রবি কিরণ, অবগুণ্ঠিতা, বীরাঙ্গনার বয়ান, পঞ্চনারীর অগ্নিবীণা, বিষ্ণুপ্রিয়া:বৃদ্ধাশ্রম, খামোস, আপনাদের সাহায্য চাই, মা ইত্যাদি।
‘অগ্নি পুষ্প’ নাটকের বিষয় ছিল ভগৎ সিং-এর উপর আধারিত। ‘মা’ নাটকটি ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের মা ও ছেলের কাহিনী। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে অত্যাচার করা হচ্ছে তার ওপর করা হয়েছে এই নাটক। ‘খামোস’-এর বিষয় বারাঙ্গনা নারীর কমনীয় প্রেমিকা সত্ত্বা, ‘আপনাদের সাহায্য চাই’-এর বিষয় নারীর উপর গার্হস্থ নির্যাতন।
এই নাট্যোৎসবে আজ উত্তরীয়, ফুল ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় মিলন খামারিয়াকে। এই নাট্যোৎসব সম্পর্কে মিলন খামারিয়া বলেন, মানুষকে সচেতন করার জন্য ‘বিশ্ব নারীদের সম্মান জানানো’র মতো বিষয় নির্বাচন করেছে মাণিকতলা দলছুট নাট্যদল। আমি তাদের এই ভাবনাকে সময়োপযোগী বলে মনে করি। নারীদের সম্মান রক্ষা করার জন্য রামায়ণ ও মহাভারত-এর মতো ঘটনা ঘটেছে। নারীদের উপর অত্যাচার হলে বিধাতাও রুষ্ট হন। বিধর্মী শাসনে এই অত্যাচার বেড়েছিল। আজ আমাদের রাজ্যের দিকে দিকে নারীদের উপর অত্যাচারের কথা যখন শুনি তখন হৃদয় ব্যথিত হয়। কিছু পাশবিক সত্ত্বার অসুরদের দ্বারা নারীরা লাঞ্চিত হচ্ছে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে আইনের মাধ্যমে। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন হতে হবে, সংঘবদ্ধভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। তবেই এই নাট্যোৎসবের আয়োজন করা সফল হবে।
‘দলছুট মানিকতলা’ নাট্যচর্চা কেন্দ্র-এর প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি ও পরিচালক মিঠু দে বলেন, দলছুট মাণিকতলা নাট্য চর্চা কেন্দ্র একমাত্র সংগঠন যারা ভারতের তথা পশ্চিমবঙ্গের মহিলা পরিচালিত নাটক নিয়ে জাতীয় স্তরে কাজ করে। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২০০০ নাট্যদল আছে এবং তারা নাট্যোৎসব করে, সবই পুরুষ পরিচালিত। মেয়েরাও নাটক পরিচালনা করতে পারে, দলছুট মাণিকতলা ও এখানে আগত নাট্যদলগুলো তার প্রমাণ। আর সেই মেয়েরা যাতে যথাযথ সম্মান পান – তা আমরা মানুষকে উপলব্ধি করাতে চাই। তাই এই নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছি আমরা। ভবিষ্যতে এমন সচেতনতার কাজ আমরা আরও করব।