মাধ্যমিক মিটলেই সুরক্ষা বৃদ্ধিতে বাড়বে পুলকারের খরচ, তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু পুলিশের

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২৬ ফেব্রুয়ারি: হুগলির পোলবা পুলকার দুর্ঘটনায় আহত ঋষভ সিংয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর অবশেষে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। পুলকার নিয়ে চালু হতে চলেছে একগুচ্ছ সুরক্ষা বিধি। আর তার জন্য বাড়বে খরচও। ইতিমধ্যেই এলাকাভিত্তিক পুলকার নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। মাধ্যমিকের পর পুলিশ অভিভাবক এবং পুলকার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

জানা গিয়েছে, রাজ্য জুড়ে দু-ধরণের পুলকার চলে। ১০ আসনের ও ২৬ আসনের। ১০ আসনের পুলকার চলে অনেক সময় সাদা নম্বর প্লেটে। জেলার পাশাপাশি কলকাতায় চলছে এমন গাড়ি। তবে এই গাড়ি দিয়ে শুধুমাত্র ১টা শিফট করা হয়। স্কুলে নিয়ে আসা ও বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। আর ২৬ আসনের গাড়ি দিয়ে দুবার ট্রিপ করা হয়। অভিযোগ, যে সমস্ত গাড়ি দিয়ে এই সব ট্রিপ করা হয়, তার অধিকাংশ পুরনো, লজঝড় অবস্থা। আর এই সব গাড়ির ফিটনেস নেই, নেই স্পিড গভর্নর। এছাড়া গাড়ির ভিতরের অবস্থা ভীষণ খারাপ। ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের রীতিমতো চাপাচাপি করে নিয়ে যাওয়া হয় এই সমস্ত পুলকারে। মঙ্গলবারই কলকাতা পুলিশের ফেসবুকে এমন তথ্য ছবি দিয়ে পোস্ট করেছেন একজন অভিভাবক। এটাই বদল করতে চাইছে পরিবহণ দফতর।

নয়া নিয়মে পরিবহণ দফতর চাইছে, যত আসন, তত জন পড়ুয়া। গাড়ির মধ্যে ক্যামেরা বাধ্যতামূলক। জি পি এস থাকতেই হবে। এছাড়া প্রতি তিন মাস অন্তর ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকতে হবে। রিসোল টায়ার চলবে না। পুলিশ ও পরিবহন দফতর এর পাশাপাশি ভেহিক্যালস ট্র‍্যাকারও লাগাতে চাইছে। এর ফলে ওই গাড়ি কোথায়, কখন যাচ্ছে, কত গতিতে যাচ্ছে তা জেনে ফেলা সম্ভব হবে। এই সমস্ত নিয়ম মানা না হলে বাতিল করে দেওয়া হবে পুলকারের লাইসেন্স।

পুলকার মালিকরা এই সব সিদ্ধান্ত মানতে রাজি৷ কেউ কেউ আবার রাজি নয় শুধুমাত্র টাকার জন্য। তাদের দাবি, এত কিছু মানতে গেলে যে টাকা প্রতি মাসে খরচ হবে সেই অনুযায়ী টাকা তারা বাচ্চাদের নিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে পায় না। পুলকার সংগঠনের হিসেব বলছে, মাথাপিছু ৭০০ থেকে ২০০০ টাকা অবধি তারা পায়। এই টাকায় যে আয় হয়, তাতে চালকের মাইনে, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি ও অন্যান্য ট্যাক্স বাবদ তাদের যা আয় হয় তা দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। সংগঠনের সদস্য সুদীপ দত্ত বলেন, “গাড়ির ভাড়া হয় প্রশাসন বিবেচনা করুক, না হয় অভিভাবকদের সাথে সমস্ত পক্ষ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিক। আমরা সুবিধা দিতে রাজি। কিন্তু আমাদের দিকটাও বিবেচনা করা হোক।”

এই বিবেচনায় কিছু অভিভাবকের সায় থাকলেও অবশ্য সায় নেই অনেক অভিভাবকদের। তানিয়া সাহা বলে একজন বলেন, ”যে টাকা দেওয়া হয় তাতে প্রাথমিক নিয়মগুলো মানা যায়। সেটা কেন মানা হচ্ছে না প্রশাসন ও সংগঠন সেটা আগে দেখুক। তানিয়াদেবীর সাথে সহমত অনেকেই। সূত্রের খবর, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মাধ্যমিক মিটলেই অভিভাবক, স্কুল, পুলিশ, পুলকার সংগঠন সাথে বৈঠক করবে রাজ্য পরিবহন দফতর।

অন্যদিকে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে অভিভাবকদের সাথে কথা বলা শুরু করল পুলিশ। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার অবধি ঝোলানো হয়েছে। বিভিন্ন ট্রাফিক গার্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের এলাকায় কত স্কুল আছে, কত পুলকার চলে, তাদের চালক কে, গাড়ির অবস্থা কি? তা নিয়ে মাধ্যমিক শেষ হওয়ার আগেই সম্পূর্ণ তথ্য দিতে হবে। যাতে আলোচনায় বসলে এই নিয়ে বিস্তারিত কথা বলা যায়। আপাতত সেই তথ্য সংগ্রহ করার কাজই শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *