মমতাকে ঝাঁসির রানির সঙ্গে তুলনা কপিলমুনি আশ্রমের মোহন্তর

তারক ভট্টাচার্য

আমাদের ভারত, ৬ জানুয়ারি:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকৃত অর্থে বীরাঙ্গনা। তিনি মানবতার পক্ষে লড়াই করছেন। সোমবার গঙ্গাসাগরে এভাবেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়ষী প্রশংসা করলেন কপিলমুনির আশ্রমের প্রধান পুরোহিত জ্ঞানদাস মহন্ত। নোটবন্দি থেকে এনআরসি- জনতা যখনই বিপদে পড়েছে, তার পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আর সে কারণেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন গঙ্গাসাগরে কপিলমুনি আশ্রমের প্রধান। তিনি এ-ও বলেন, সবাই বীরাঙ্গনা হতে পারেন না। এক বীরাঙ্গনা ছিলেন ঝাঁসির রানি। আর এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মানবতার জন্য লড়াই করছেন। সকলের উচিত তাঁকে সঙ্গ দেওয়া।

এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কড়া সমালোচনা করেছেন এই সন্ন্যাসী। রাষ্ট্রনীতি থেকে শুরু করে বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করছে বলে, এদিন দ্ব্যর্থহীন ভাষার নিন্দা করেন তিনি। জ্ঞানদাস মহন্তের ভাষায়, ‘মোদি ও অমিত শাহ দেশকে লুঠ করার চেষ্টা করছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝি বসুধৈব কুটুম্বকম অর্থাৎ বিশ্বসংসার আমাদের আত্মীয়। আমরা বলি বিশ্বের কল্যাণ হোক।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘এই বিশ্ব কি আলাদা আলাদা? কেন এখানে বিভাজন!’ তিনি বলেন, ‘এই বিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে মায়ের থেকে। তাহলে মোদিজি কার থেকে কাকে আলাদা করতে চাইছেন? সবাই বলছেন মোদিজি বিভেদ করছেন, আমি বলতে চাই, তিনি বিভাজন নয়, দেশকে বিচ্ছিন্ন করছেন।’

গঙ্গাসাগর মেলার আগে তার প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করতে প্রায় প্রত্যেক বছরই সাগরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এদিন কাকদ্বীপে প্রশাসনিক বৈঠকের পর তিনি সরাসরি চলে আসেন সাগরদ্বীপে। বিকেল চারটে নাগাদ তিনি পৌঁছন কপিল মুনির আশ্রমে। এরপর বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কপিল মুনির আশ্রমের প্রধান পুরোহিত। মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে দাঁড় করিয়েই এদিন মোদি সরকারকে একহাত নিয়েছেন এই সন্ন্যাসী। নোটবন্দি থেকে শুরু করে একাধিক সরকারি নীতির সরাসরি সমালোচনাও করেছেন তিনি। জ্ঞানদাস মোহন্ত শুধু মোদি সরকারের সমালোচনাই করেননি, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান এবং রাম মন্দির নিয়েও মোদি সরকারকে একহাত নিয়েছেন তিনি। এদিন বিভাজন নিয়ে প্রশ্ন তুলে জ্ঞানদাস মহন্ত বলেন, ‘কীসের হিন্দু, কীসের মুসলিম? উনারা সর্বত্রই ভোটব্যাংকের রাজনীতি করছেন। এটা ভারত নয়। ভারত সকলের। হিন্দু-মুসলিম, শিখ-খৃষ্টান এখানে সবাই সমান।’

জ্ঞানদাস মহন্তের কথায়, ‘গঙ্গাসাগর এমন একটা তীর্থক্ষেত্র যেখানে জাত-পাত, ছুত- অছ্যুত বিচার করা হয় না। এটা সর্বধর্ম সমন্বয়ের তীর্থ। কপিলমুনি আমাদের তাই শিখিয়েছেন। আগে বলা হত, সব তীর্থ বার বার গঙ্গাসাগর একবার। কিন্তু এখন মুখ্যমন্ত্রী যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন, তাতে আপনারা বারবার আসুন। আজকে গঙ্গাসাগরের যে উন্নতি হয়েছে এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই। এখানে যারা আসেন তাঁরা বেশিরভাগই হিন্দু। কিন্তু আগের কোনও সরকারই এই তীর্থস্থানের জন্য কিছু করেননি। যিনি করেছেন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’

জ্ঞানদাস মহন্ত এই উন্নয়নকে সামনে রেখেই বিজেপিকে বিঁধেছেন। তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দোপাধ্যায় গঙ্গাসাগরের জন্য এত কিছু করেছেন, তা-ও এর লাভ নেওয়ার চেষ্টা তিনি করেন না। অথচ বিজেপি সব সময় বলে, আমরা এই করেছি, আমরা ওই করেছি। কিন্তু কেন? কী করেছে বিজেপি? রাম মন্দির তৈরির কথা বলেছে কোর্ট। বিজেপি বলছে তারা করছে।’ তিনি বলেন, ‘আদালত চলে তথ্যের ভিত্তিতে, অথচ মন্দির বিজেপি তৈরি করছে বলা হচ্ছে। এটাই যদি সত্যি হয়, এতদিন কেন রাম মন্দির তৈরি করা যায়নি? কেন কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হল? বিজেপির লুঠ বেশিদিন চলবে না। কারণ দেশের মানুষ তাদের হঠিয়েই ছাড়বে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *