অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, কলকাতা, ২ অক্টোবর: বিশ্বের প্রথম সাপ্তাহিক হিসাবে পরিচিত সুইডেনের Post-och Inrikes Tidningar। যাত্রা শুরু ১৬৪৫-এ। এখন প্রকাশিত হয় অনলাইনে। প্রথম সংবাদপত্র Haarlems Dagblad-এর যাত্রা শুরু নেদারল্যান্ডসের হার্লেম থেকে, ১৬৫৬-তে। এখনও চলছে। যদিও নাৎসিরা নেদারল্যান্ডসের দখল নিয়ে এটিকে অন্য একটি সংবাদপত্রের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলো। ১৭০৫-এ জার্মানিতে প্রথম প্রকাশিত Hildesheimer Allgemeine Zeitung এখনও টিঁকে আছে।
সেই সময় থেকে নানা ধরণের সংবাদপত্র এসেছে, গিয়েছে, টিঁকেও আছে অল্প কিছু। ভারতে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ১৭৮০-র ২৯ জানুয়ারি। জেমস অগস্টাস হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’। অনেকের কাছেই তিনি ভারতে সংবাদপত্রের জনক বলে পরিচিত। এর পর থেকে দেশে-বিদেশে বহু সংবাদপত্র এসেছে, গিয়েছে। এই ভাঙাগড়ার মধ্যেও সাংবাদিকতার পুরোদস্তুর প্রাতিষ্ঠানিক পাঠক্রম চালু করতে লেগে গিয়েছিল অনেকটা সময়।
বিশ্বের প্রথম জার্নালিজম স্কুল, সংক্ষেপে ‘জে স্কুল’ চালু হয়েছিল মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯০৮ সালে। প্রতিষ্ঠাতা ওয়াল্টার উইলিয়ামস মনে করতেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে পেশাদারিত্বের সঙ্গে পড়ানো হোক সাংবাদিকতা। ১৯০৯-এ দেওয়া হলো প্রথম ডিগ্রি। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হলো ১৯২১-এ। প্রথম ডক্টরেট ১৯৩৫-এ।
সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন পাঠক্রমে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইন্সটিট্যুট অফ মাস কমিউনিকেশন। যাত্রা শুরু ১৯৬৫-তে। ভারত সরকারের এই প্রতিষ্ঠানের ৬টি ক্যাম্পাস রয়েছে। কিন্তু এর অনেক আগেই এই পাঠক্রম চালু করে উপমহাদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিল
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পায়ে পায়ে সেই পাঠক্রমের ৭৫ বছর। প্রথমে গুটিকয় পড়ুয়া নিয়ে স্বল্পমেয়াদি পাঠক্রম। প্রথম দিকের স্মরণীয় শিক্ষকদের অন্যতম ছিলেন স্বর্গীয় চপলাকান্ত ভট্টাচার্য। অনেকের স্মৃতিতে এখনও জাগরুক বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক ডঃ তপতী বসু।
এর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পাঠক্রমের মেয়াদ ও আসনসংখ্যা— দুইই বেড়েছে। আগে যে সব বিশেষায়ন এই পাঠক্রমে পরিচিত ছিলো না, যেমন ডেভলপমেন্ট জার্নালিজম, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং জার্নালিজম অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া, পড়ানো হচ্ছে সে সব। পরবর্তীকালে নানা সময়ে দেশের এবং এ রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে স্নাতকোত্তর পাঠক্রম। এমনকি নানা কলেজ ও প্রতিষ্ঠানেও চলছে সাংবাদিকতার স্নাতক এবং ডিপ্লোমা/ সার্টিফিকেট পাঠক্রম।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন পাঠক্রমের সফল পড়ুয়ারা কর্মসূত্রে ছড়িয়ে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি দেশের বাইরেও। অনেক স্মৃতি, অনেক কাহিনী জড়িয়ে এই বিভাগের সঙ্গে।
তার মধ্যে রয়েছে চাপা দুঃখ-ক্ষোভও। এরকমই এক প্রাক্তনী এবং বিভাগের শুভাকাঙ্খী এই প্রতিবেদককে জানালেন, “বিভাগের হাল খুব খারাপ। প্রায় ২৬ বছর আগে স্থায়ী শিক্ষক হিসাবে শেষ এসেছেন বেরা স্যর, ১৯৯৮ সালে। ৬টি পোস্ট, ৫টি ফাঁকা। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদ কার্যত অচল, নড়বড়ে। সেখানে কী আর হবে।
আমি বিভাগের প্রাক্তনী, কষ্ট লাগে। খারাপ লাগে। তাই যাই, যোগাযোগ রাখি। বর্তমান বিভাগীয় প্রধান এই বিষয়ের লোক নন। উনি গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের শিক্ষক। আসন সামলাচ্ছেন সই সবুদ করার লোক হিসেবে। আর পদ হিসেবে উনি arts secretary ও বটে। সম্ভবত কমার্স সেক্রেটারিও। সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান হওয়ার কেউ নেই। একা বিভাগ রক্ষা করছেন অঞ্জন বেরা স্যর। আর কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই।”
সুখ-দুঃখের এই আবেগের মধ্যেই প্রস্তুতি চলছে বিভাগ শুরুর ৭৫ বছর স্মরণে উদযাপন যাত্রার। ৭ অক্টোবর, মহাপুজোর চতুর্থীর দিন ওই যাত্রা হবে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস থেকে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার পর্যন্ত। স্বদেশী আন্দোলনে সংবাদপত্র প্রকাশনা সংক্রান্ত নানা উদ্যোগের স্মৃতিবিজড়িত সুবোধ মল্লিকের বাড়ি ওই মাঠের ঠিক পাশেই। তাতে সামিল হবেন বিভাগের বর্তমান ও প্রাক্তনীদের অনেকেই।