life imprisonment, ঝাড়গ্রামে কুড়ুল দিয়ে দাদাকে মারার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভাই ও ভাইপোর

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ১৫ জুলাই: বাড়ির সীমানায় থাকা গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে কুড়ুল দিয়ে দাদাকে খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হল ভাই ও ভাইয়ের ছেলের। সোমবার দুপুরে সাজা ঘোষণা করেন ঝাড়গ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক জিমূতবাহন বিশ্বাস। যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্তরা হলেন অমৃত পাত্র (৫৫), মানস পাত্র (২৯)। অমৃত পাত্র ও মানস পাত্র হলেন বাবা ও ছেলে। তাদের বাড়ি বেলিয়াবেড়া থানার খড়িপাড়িয়া গ্রামে।

ঝাড়গ্রাম আদালতের সরকারি আইনজীবী সত্যজিৎ সিনহা বলেন, “একটি বাড়ির সীমানায় থাকা গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে কুড়ুল দিয়ে নিজের দাদাকে খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত তার ভাই ও তার ভাইপোকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেছে আদালত”। জানা গিয়েছে, বেলিয়াবেড়া থানার অন্তর্গত খড়িপাড়িয়া গ্রামে বাড়ির সীমানায় থাকা একটি গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি দাদা কালিপদ পাত্র’র সঙ্গে তার ভাই অমৃত পাত্র ও তার ভাইপো মানস পাত্র’র বচসা শুরু হয়। বচসা চলাকালীন ভাইপো মানস তার জেঠু কালিপদ পাত্রর পায়ে কোদাল দিয়ে কোপ মারে। ঘটনায় কালিপদবাবুকে পরিবারের সদস্যরা গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন। পরের দিন সকালে কালিপদবাবুর ছেলে গোপাল পাত্র খড়্গপুরের কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরে। গোপাল তার বাবা কালিপদ পাত্রকে পুনরায় চিকিৎসার জন্য গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে ফের শুরু হয় বচসা। অভিযোগ, বচসা চলাকালীন অমৃত পাত্র হাতে একটি মোটা লাঠি নিয়ে এবং তার ছেলে মানস পাত্র হাতে কুড়ুল নিয়ে কালিপদ পাত্রর বাড়িতে চড়াও হয়। মানস কুড়োল দিয়ে কালিপদবাবুর মাথায় কোপ বসায়। রক্তাক্ত অবস্থায় কালিপদবাবুকে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়। কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাওড়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে কালিপদবাবুকে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন পাঁচ দিনের মাথায় মৃত্যু হয় কালিপদবাবুর।

ঘটনার দিনই ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি কালিপদ পাত্রর এক ভাইপো বেলিয়াবেড়া থানায় লিখিত অভিযোগ জানায়। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মানস পাত্রকে গ্রেফতার করে ও তার কয়েকদিন পরেই অমৃত পাত্রকেও গ্রেফতার করে। গুরুতর আঘাত ও প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টার ঘটনায় মামলা রুজু করে পুলিশ তাদের আদালতে পেশ করেন। আদালতে নির্দেশে বাবা ও ছেলে দু’জনেই জেল হেফাজতে থাকে। পরে মামলার সঙ্গে খুনের ধারাও যুক্ত করা হয়। তিন মাসের মাথায় ২২ মার্চ পুলিশ আদালতে চার্জশিট পেশ করে। পরে ১০ অক্টোবর সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট আদালতে পেশ করে পুলিশ। ২০২২ সালের ৭ জুলাই চার্জ ফ্রেম গঠিত হয়। ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের ভিত্তিতে গত শুক্রবার বাবা ছেলেকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, “আমাদের ট্রায়াল মনিটরিং সেল এই ধরনের অপরাধমূলক মামলাগুলিতে খুব দ্রুত ট্রায়াল শেষ করে সাজা ঘোষণা করেছে। খুনের ঘটনায় দু’জনের সাজা হয়েছে। চার্জ ফ্রেম গঠনের মাত্র দু’বছরের মধ্যেই ট্রায়াল শেষ হয়েছে। তার জন্য আগামী দিনেও যেন প্রকৃত দোষী বা অপরাধীদের খুব দ্রুত ট্রায়াল শেষ করে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা যায় সেই বিষয়ে আমরা প্রচেষ্টা করবো।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *