সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৫ মার্চ: রাজ্যজুড়ে শাসক দলের সংখ্যালঘু তোষামোদে ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন জানিয়ে দেওয়াল লিখন শুরু করেছে। “হিন্দু-হিন্দু ভাই ভাই, ছাব্বিশে বিজেপি সরকার চাই।” এই আবেদন জানিয়ে দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে সরগরম জেলার রাজনৈতিক মহল। বিজেপির এই দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে জোর চর্চা জেলার রাজনৈতিক মহলে। আগামী ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যে হিন্দুত্বকে সামনে রেখে লড়াইয়ের ময়দানে নামবে এই দেওয়াল লিখনে সেটা পরিষ্কার। আগমী বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের পালে জনসমর্থন টানতে এখন থেকেই উঠেপড়ে লেগেছে জেলার রাজনৈতিক দলগুলি। বিজেপিও নেমে পড়ছে ময়দানে।
জেলার রাজনৈতিক মহলের মত, আগামী ভোটে হিন্দু ভোট এককাট্টা করতে কোনও চেষ্টাই বাকি রাখতে চায় না পদ্ম শিবির। বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় এভাবে দেওয়াল লিখন করা হয়েছে। এসব দেওয়াল লিখনে হিন্দুদের এককাট্টা হওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। হিন্দু ঐক্য হওয়ার ইস্যুকে সামনে রেখে গ্রামে গ্রামে চলানো হচ্ছে প্রচার। শনিবার বিজেপির এই প্রচারে উৎসাহ দেখা যায়। এলাকার বিজেপির নেতা ও কর্মীদের দাবি, রাজ্যে শাসক দল বিশেষ এক সম্প্রদায়কে তোষণ করে চলেছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে হিন্দুদের মধ্যে। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ দেখা যাবে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া ঝড়ে বাঁকুড়া জেলায় রীতিমতো চাপে পড়েছিল ঘাসফুল শিবির। লোকসভা নির্বাচনে ২০১৯ বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর দু’টি আসনেই জয়লাভ করে বিজেপি। গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও জেলার ১২টি আসনের মধ্যে ৮টিতে জয় পায় পদ্ম প্রার্থীরা। এতে বিজেপি কর্মী ও সমর্থকদের উৎসাহিত ও শাসক দলের কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা যায়। কিন্তু, পরবর্তীতে নিজেদের সেই জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। দুই বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেয়। পাশাপাশি পঞ্চায়েত, পুরসভা নির্বাচন এবং ২০২৪- এর লোকসভা নির্বাচনে পিছিয়ে পড়তে হয় বিজেপিকে। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। সেই লক্ষ্যে বহু আগে থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছে বিজেপি। শাসক দল তৃণমূল একপা পিছাতেও রাজি নয়। তাই প্রধান দুই প্রতিপক্ষ লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়েছে।
বিজেপির এই প্রচারকে পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূল ও বামেরা। তৃণমূলের দাবি, প্রচারে আসার জন্যেই এসব করছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, বিজেপি যাই করুক ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শেষ হাসি হাসবে তৃণমূলই।
অন্যদিকে কটাক্ষের সুরেই বাম নেতাদের বক্তব্য, ধর্ম নিয়ে রাজনীতিতে তৃণমূল ও বিজেপি একে অপরকে দোষারোপ পাল্টা দোষারোপ করছে। আসলে ওই দু’টি দল একই গোডাউনের দু’টি পৃথক শোরুম। বিজেপি ও বামেদের আটকাতে শাসক দল ভোটার তালিকা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সর্বশক্তি দিয়ে নেমে পড়েছে।