আমাদের ভারত, ৩ আগস্ট: ফের কু- কথা বলে বিতর্কে জড়ালেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি। নিজের স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে এক মহিলা বন আধিকারিককে রীতিমতো ভর্ৎসনা করেছেন রাজ্যের এই মন্ত্রী। যা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। সরব হয়েছে বিজেপি সহ বিরোধীরা। ঘটনাকে অবাঞ্ছিত বলেছেন তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ।
তাজপুরে বনদপ্তরের জমি থেকে হকার উচ্ছেদের বিরোধিতা করেন মন্ত্রী অখিল গিরি। এরপরই মহিলা আধিকারিকে হুমকিও দেন মন্ত্রী। ওই মহিলা আধিকারিক সরাসরি মন্ত্রীকে বলেন, স্যার একবার দোকান তুলে দেওয়া হয়েছে আবার বসানো হলো। একবার আলোচনায় বসতে পারলেন না? এরপরই মন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, “আপনার আয়ু বেশি দিন নেই। সবাইকে নিয়ে চলুন। বেশিদিন থাকতে পারবেন না আর ৭-৮ দিন, ১০ দিন। বিট অফিসার, টফি অফিসার সব জানি। কত বড় দুর্নীতি হয় সব জানি। ভেতরে কী আছে সব জানি। সব ফাঁস করে দেবো বিধানসভায়।
এরপর ওই অফিসার বলেন, আপনার সঙ্গেও পার্সোনালি কোনো ব্যাপার নয়, ওদের সঙ্গেও নয়। তখন মন্ত্রী হকারদের দিকে দেখিয়ে বলেন, ওরা সারারাত এখানে থাকে, আপনি থাকেন না। ঝড় মাথায় নিয়ে ওরা থাকেন। কারোর কথা শুনতে চাইছেন না। এরপর আঙ্গুল উঁচিয়ে মন্ত্রী বলেন, বেশি কথা বলবেন না। আপনি ফিরে যেতে পারবেন না। সরকারি কর্মচারি মাথা নিচু করে কথা বলবেন। কত বড় জানোয়ার, বেয়াদব। কথা বললে হবে না, ডাং দিয়ে পেটাবো, তখন বুঝবেন, বলেন মন্ত্রী অখিল গিরি। এরপরই তাঁর সঙ্গে তাঁর পাশে থাকা তাঁর অনুগামীরা প্রায় একই সুরে কথা বলতে থাকেন।
সূত্রের খবর, রামনগর বিধানসভা এলাকার মধ্যেই পড়ে তাজপুর। সেই তাজপুরের বনদপ্তরের জায়গায় দোকান বসতে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন অখিল গিরি। কাঁথির রেঞ্জ অফিসার সংবাদ মাধ্যমে বলেন, মন্ত্রী বলেছেন ঠেলে ফেলে দেবো সমুদ্রে। সাত দিনের মধ্যে বদলি করে দেব।
অখিল গিরি পরে বলেন, এত মানুষকে বেকার করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দুর্নীতিগ্রস্ত ওরা। এখানে গাছ লাগানোর নামে দুর্নীতি হয়।
বিজেপি অখিল গিরির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের কথোপকথনের একটি ভিডিও পোস্ট করে বিজেপির তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এই মন্ত্রীকে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেবেন?জেলে পাঠাবেন? সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও মহিলাদের মর্যাদাহানির অভিযোগ দায়ের হবে? দলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের কথায় এটাই তৃণমূলের প্রকৃত ভাষা ও সংস্কৃতি। তিনি বলেন, যিনি( অখিল গিরি) রাষ্ট্রপতিকে কু- কথা বলতে পারেন, তিনি তো বনদপ্তরের আধিকারীকে এসব কথা বলবেনই।
অখিল গিরির কথা শুনে কুনাল ঘোষ বলেছেন, অখিল গিরি যে ভাষায় কথা বলেছেন তা ভর্ৎসনার যোগ্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় কুনাল ঘোষ লিখেছেন, “মন্ত্রী অখিল গিরির কথা ও আচরণের বিরোধিতা করছি। এটা অবাঞ্ছিত। বনদপ্তর নিয়ে কিছু বলার থাকলে মন্ত্রী বীর বাহা হাঁসদাকে বলতে পারতেন। তার বদলে মহিলা অফিসারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।” তবে শেষে তিনি ছেড়ে কথা বলেননি রাজ্যে বিরোধী দলগুলিকে। তিনি লিখেছেন, “সিপিএম, বিজেপির এই নিয়ে বলার অধিকার নেই। ওরা এর থেকেও অনেক কুৎসিত কাজ বারবার করেছে।”
সূত্রের খবর, গোটা বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দিচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের ডিএফও সত্যজিৎ কর। রিপোর্ট পেলে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকেও জানানো হতে পারে।