সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২১ মে: বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী ডাঃ সুভাষ সরকার এবং তাদের নেতা মন্ত্রীদের গাছে বেঁধে কৈফিয়ৎ চান। আজ শালতোড়ায় তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর সমর্থনে আয়োজিত এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলীয় কর্মীদের এই নিদান দেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাথে কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সুভাষ সরকার বা তার দলের নেতারা বিজেপির হয়ে ভোট চাইতে এলে নির্বাচনের সময় মিথ্যা কথা বলছে বলে শুধু গাছে বেঁধে রাখবেন। মারবেন না। তারপর আমাকে ফোন করবেন। আমি প্রতিনিধি পাঠাবো রিপোর্ট কার্ড হাতে নিয়ে।
তিনি বলেন, ২০১৯ ও ২০২১ এ মোদীর কথায় বিশ্বাস করে আপনারা সুভাষ সরকার, চন্দনা বাউরি ও নীলাদ্রি শেখর দানাকে জিতিয়েছেন।কিন্তু গত ৫ বছরে ৫ জায়গায় গিয়েছেন সুভাষ সরকার? অভিষেক এদিন কটাক্ষের সুরে বলেন, এখন ভোট এসেছে তাই দেখা যাচ্ছে সুভাষবাবু কারো জুতো পালিশ করছেন, কাউকে সাবান মাখিয়ে স্নান করিয়ে দিচ্ছেন। এরপরই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গলার সুর চড়িয়ে বলেন, ওদের ডেকে এনে বাড়ির বাসন মাজান, শৌচাগার পরিষ্কার করান। এরাই আপনাদের ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আবাসের টাকা আটকে রেখে দিয়েছে। এখন বলছে বিজেপি জিতলে ৩ মাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেবে। এরপর কোচবিহার জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দীপা চক্রবর্তীর একটি অডিও শুনিয়ে তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, বিজেপির কোনো নেতা মন্ত্রীর ক্ষমতা নেই লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে।দেবে। রাষ্ট্রপতিরও ক্ষমতা নেই। এটাই তৃণমূলের গ্যারান্টি।
এদিনের সভায় শালতোড়ার পাথর শিল্পর প্রসঙ্গ তুলে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পাথর শিল্প বন্ধ করে দিয়েছে। বীরভূমের পাঁচামীর পরই শালতোড়ার পাথর শিল্প জেলার অর্থনীতিতে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে এই শিল্পে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে শর্ত সাপেক্ষে তা চালু হলেও যে কোনো মুহূর্তে ফের বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পাথর শিল্পের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাঁকুড়ার সাংসদ বিজেপির। শালতোড়া, ছাতনা ও বাঁকুড়ার বিধায়কও বিজেপির। কেন্দ্রীয় সরকার পাথর শিল্প বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু সুভাষ সরকার, চন্দনা বাউরি, নীলাদ্রি শেখর দানা কিম্বা সত্যনারায়ণ মুখার্জিরা কেউ একটা চিঠি দিয়ে বলেনি এখানের ক্রাশার এবং পাথর খাদান চালু হোক। যদি একটাও চিঠি লিখে থাকেন দেখাতে পারলে আমি তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইতে কোনোদিন আসবো না।
তিনি বলেন, ২০১৯- এ সুভাষ সরকারকে জিতিয়েছেন, পাথর শিল্প বন্ধ হয়েছিল। ২০২১- এ চন্দনা, সত্যনারায়ণ ও নীলাদ্রি শেখরকে জিতিয়েছেন, ১০০ দিনের টাকা, আবাসের টাকা বন্ধ হয়েছে। জেলাজুড়ে পানীয় জল সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর হাজার হাজার টাকা খরচ করে জেলার ৩ লাখ পরিবারে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছে। খুব শীঘ্রই সব বাড়িতেও পৌঁছে যাবে। কিন্তু ফের ওরা জিতলে জল কল সব বন্ধ হয়ে যাবে।
তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে কথা বলতে হয় বলে তিনি সরাসরি সুভাষ সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ভঙ্গিতে বলেন, ক্ষমতা থাকলে সুভাষ সরকার তার ৫ বছরের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসুন। আমরাও আমাদের ১৩ বছরের কাজের খতিয়ান দেখাব। আপনারা ২০২১- এ হেরে যাবার পর কেন্দ্রীয় সরকারকে দিয়ে সব আটকে দিয়েছেন। তখন থেকে ১০ পয়সাও রাজ্যে পাঠাননি। শ্বেতপত্র প্রকাশ করে প্রমাণ করুন ১০ পয়সা দিয়েছেন তাহলে তিনি আর কোনোদিন রাজনীতির আঙিনায় পা রাখবেন বলেও জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।