ENT Physicians Association, ভারতের ইএনটি চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃত্বে বঙ্গসন্তান

আমাদের ভারত, ১৭ ফেব্রুয়ারি: ভারতের ইএনটি বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠন ‘দি অ্যাসোসিয়েশন অফ ওটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট অফ ইন্ডিয়া’ (এওআই)-র ছিয়াত্তর বছরের ইতিহাসে নব নির্বাচিত কনিষ্ঠতম বাঙ্গালি সভাপতি হয়েছেন ডা: দ্বৈপায়ণ মুখার্জি। বহু বছর পর দেশের কোনো চিকিৎসক সংগঠনের জাতীয় সভাপতি পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত হলেন।

আজকাল স্মার্ট ফোন খুললে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন শহরের দূষণের মাত্রা এতটাই বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে যে মানুষকে ঘর থেকে বেরতে বারণ করা হচ্ছে। বাস্তবে সেটি মেনে চলা বোধ হয় কারও পক্ষেই সম্ভব হয় না।
এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে দেশে বাড়ছে দূষণ জনিত অ্যালার্জি, হাঁপানি, সিওপিডি বা সাধারণ সর্দি- কাশির প্রকোপ।

এর সঙ্গে অন্যান্য নাক, কান, গলার সমস্যা তো আছেই। বাড়ছে হেড অ্যান্ড নেক, ল্যারিঙ্গস ও ভোকাল কর্ডের ক্যান্সার। ভিড় বাড়ছে হাসপাতালের আউটডোর আর ইএনটি ক্লিনিকগুলিতে। আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক উন্নত। অনেক আপাত অসম্ভবও আজ সম্ভব বা সাধারণ হয়ে গেছে। নাক, কান, গলা শাখাও এদিক থেকে পেছিয়ে নেই। দরকার জনসাধারণ ও চিকিৎসা জগতের মানুষের সচেতনতা, আর আমাদের মতো উন্নতশীল এশিয় দেশের জন্য কার্যকরী রূপরেখা। আজ দেশের ইএনটি চিকিৎসাকে আরও গতিশীল ও ফলপ্রদ করতে এটি প্রয়োজন।

সৌভাগ্যের কথা ও পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে গর্বের বিষয় যে, এই ভাবনাটা প্রথম ভেবেছেন ডা: দ্বৈপায়ন মুখার্জি। কলকাতা প্রেস ক্লাবে শনিবার একটি অনুষ্ঠানে এওআই-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। এই উপলক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংস্থার পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ডা:অমিতাভ রায়চৌধুরী বলেন, আজ বাংলার চিকিৎসকদের কাছে একটি গর্ব ও আনন্দের দিন। দেশের ইএনটি চিকিৎসার নীতি নির্ধারণে ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বাংলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

সংস্থার রাজ্য সম্পাদক ডা: স্নেহাশীষ বর্মণ বলেন, বাঙ্গালোরে আয়োজিত এওআইএর গত জাতীয় সম্মেলনে দেশের সমস্ত ইএনটি চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে ডা: দ্বৈপায়ণ মুখার্জিকে জাতীয় সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এর আর একটি উজ্জ্বল দিক হল এই নির্বাচনের ফলে সংগঠনের ঐতিহ্যমন্ডিত আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা পত্রিকা বা ইন্ডেকস জার্ণাল ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ওটোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’র জাতীয় কার্যালয় ভোপাল থেকে ছয় বছরের জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায় স্থানান্তরিত হবে।

উল্লেখ্য, এমডি থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় ডক্টরেট বা ডিএম হতে গেলে কিংবা মেডিক্যাল কলেজের লেকচারার থেকে অধ্যাপক পদে উন্নীত হতে গেলে কোনো রোগীর নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসায় বা বিশেষ কোনো বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাপত্র এই ধরণের জার্নালে প্রকাশ করা আবশ্যিক। জার্নাল অফিস কলকাতায় চলে এলে আমাদের এই ভালবাসার শহরেই সারা দেশের ইএনটি চিকিৎসকদের পেশ করা গবেষণাপত্রের মাণ নির্নয় ও প্রকাশের কাজ করা হবে।

এছাড়াও এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের রাজ্য শাখার প্রেসিডেন্ট ডা: উৎপল জানা, কোষাধ্যক্ষ তরুণ চিকিৎসক ডা: অজয় খাওয়াস, স্টেট জার্নালের সম্পাদক ডা:;বিধান রায় ও রাজ্য এডিটোরিয়াল বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা: সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। ইএনটি বিশেষজ্ঞরা সভায় তাঁদের বক্তব্য রাখেন।

ডা: দ্বৈপায়ন মুখার্জি তাঁর ভাষণে উপস্থিত সকলকে ও দেশের সমস্ত ইএনটি বিশেষজ্ঞদের তাঁকে মনোনিত করার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এখানে সব চিকিৎসা হয় ইউরোপীয় ও আমেরিকান মত অনুসারে, দরকারে সাহায্য নেওয়া হয় ওই সব দেশেরই তথ্য সমূহের। কিন্তু আমাদের দেশের আবহাওয়া, মানুষের শারীরিক গঠন, রীতিনীতি সব কিছুই পাশ্চাত্যের থেকে আলাদা। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের সব শাখাতেই ভারতীয়দের জন্য একটি রূপরেখা থাকা জরুরি।

এর পাশাপাশি নাক, কান, গলা শাখার চিকিৎসা সংক্রান্ত স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজও খুব শীঘ্র শুরু করা হবে বলেও তিনি জানান। তবে আধুনিক উন্নততম চিকিৎসা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গেলে প্রয়োজন জনগণ ও সাধারণ চিকিৎসকদের সচেতনতা।

এবিষয়ে দেশজোড়া বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচার ও চিকিৎসকদের জন্য বিভিন্ন নিরন্তর মেডিক্যাল শিক্ষা (সিএমই), কর্মশালা প্রভৃতি আরম্ভ করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর। পরিশেষে তিনি এ বিষয়ে তাঁর সকল সতীর্থ ও সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতা প্রার্থনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *