BDO, Govindachak দেনান-দেহাটি জলনিকাশী প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ রূপায়ণ না হওয়ায় জনসাধারণের দুর্ভোগ চরমে, গোবিন্দচকের বেআইনি মাছের ভেড়ি সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন বিডিও’র

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ৮ অক্টোবর: কোলাঘাট ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ দেনান-দেহাটি জল নিকাশী প্রকল্প ৪৮ বছর পরও রূপায়িত না হওয়ায় ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার জল রূপনারায়ণ নদীতে বের হতে পারছে না। ফলস্বরূপ প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে জলমগ্ন রয়েছে কোলাঘাটের প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশটি গ্রাম। এই অবস্থায় জলবন্দি এলাকায় তৈরী হওয়া গোবিন্দচকের বেআইনি মাছের ভেড়ি সংলগ্ন এলাকা আজ পরিদর্শনে আসেন কোলাঘাটের বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সেচ দপ্তরের এসডিও। এছাড়াও পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক সহ সাগরবাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ- প্রধান ও বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা। পরিদর্শনের পর বিডিও গোবিন্দচক স্লুইশগেটের সামনে দুটি বেআইনি মাছের ভেড়ির মধ্য দিয়ে যে নাসা খালটি মাঠ পর্যন্ত গিয়েছে, সেই নাসা খালটি অবিলম্বে পরিষ্কার ও সংস্কারের নির্দেশ দেন গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধানকে। এছাড়াও জলমগ্ন এলাকার দূষিত জল দ্রুত বের করার ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য আগামী ১৪ অক্টোবর বিকেলে বিডিও অফিসে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে মিটিং করা হবে বলে উনি জানিয়েছেন।

কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক অভিযোগ করে বলেন, ১৯৭৫ সালে সেচ দপ্তর উক্ত এলাকার নিকাশী সমস্যা সমাধানে দেনান-দেহাটি ড্রেনেজ স্কিম রূপায়ণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকল্প মঞ্জুরের ৪৮ বছর পরও প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ রূপায়ণ না হওয়ায় চলতি বছরেও কোলাঘাট, পাঁশকুড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশের আমন ধানের চাষ নষ্ট হয়েছে। শুধু তাই নয়, এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল ফুল সহ নিচু এলাকার রাস্তাঘাটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জল নিকাশীর অভাবে বেশ কিছু পুকুরও ইতিমধ্যে ডুবে গিয়ে মাছ ভেসে গিয়েছে। অথচ এলাকা থেকে মাত্র ছ-সাত কিলোমিটার দূরেই কোলাঘাটের রূপনারায়ণ নদী। কোলাঘাটের কাছে রূপনারায়ণের এখনো জলবহন করার যে ক্ষমতা রয়েছে, তাতে এলাকা জলমগ্ন হওয়ার কথা নয়। শুধুমাত্র জল নিকাশীর সুষ্ঠু বন্দোবস্ত না থাকায় নিকাশী খালগুলি নিয়মিত পূর্ণ সংস্কার না হওয়ায় ও খালের ভেতরে যত্রতত্র অবৈধ কাঠামো এবং ডজলনিকাশী অবরুদ্ধ করে বেআইনি মাছের ভেড়ি গড়ে ওঠার কারণে এই বিপত্তি বলে নারায়ণবাবুর অভিযোগ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাঁশকুড়া ব্লকের কেশাপাট, মাইশোরা, পাঁশকুড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েত সহ কোলাঘাট ব্লকের বৃন্দাবনচক, সিদ্ধা-১ ও ২, খন্যাডিহি, সাগরবাড়, পুলশিটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় শতাধিক মৌজার জলনিকাশী হয়ে থাকে ৬ নম্বর(অধুনা ১৬ নম্বর) জাতীয় সড়কের ধার বরাবর সেচ দপ্তরের দেহাটি খাল দিয়ে। কিন্তু ওই বিস্তীর্ণ এলাকার তুলনায় খালটি ঠিকমত প্রশস্ত না হওয়ায় ফি বছর সাধারণ বর্ষণে এলাকার নিচু অংশের মৌজাগুলি জলমগ্ন হয়ে মাঠের ফসল, পুকুর, রাস্তাঘাট ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষক সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সেচ দপ্তর ১৯৭৫ সালে বরদাবাড় থেকে দেনান পর্যন্ত নতুন একটি খাল খনন করে (যা দেনান খাল নামে পরিচিত) তা দেহাটি খালের সাথে সংযুক্তির মাধ্যমে “দেনান-দেহাটি জলনিকাশী প্রকল্প” রূপায়ণের জন্য একটি প্রকল্প মঞ্জুর করে। কিন্তু আজো তা পূর্ণাঙ্গভাবে রূপায়িত না হওয়ায় দুই ব্লকের লক্ষাধিক মানুষ প্রতি বছর নানাভাবে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। দেহাটি খাল ও ওই মেন খালের সাথে যুক্ত টোপা ড্রেনেজ, চাপদা-গাজই সহ বিভিন্ন নিকাশী খাল মজে যাওয়ার কারণে এবং নতুন খনন করা দেনান খাল দিয়ে দেহাটি খালের উপরাংশের জল বের করার পরিকল্পনা কার্যকরী না হওয়ার ফলে প্রত্যেক বছর কয়েক হাজার মানুষকে এভাবে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *