রাজেন রায়, কলকাতা, ১২ ডিসেম্বর: প্রশাসনিক দ্বৈরথ থেকে ক্রমশ ব্যক্তিগত দ্বৈরথে পরিণত হচ্ছে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম ফিরহাদ হাকিমের লড়াই। রাজভবনের সামনে দাঁড়িয়ে হুঙ্কার দিয়ে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তাঁকে ‘উপড়ে’ ফেলা এত সহজ নয়। এক সপ্তাহের মধ্যে শুক্রবার ফিরহাদ হাকিমকে আইনি নোটিস পাঠিয়ে সেটাই বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন বৈশাখী। পুরমন্ত্রীকে তাঁর ‘বিতর্কিত মন্তব্য’র জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বললেন বৈশাখীর আইনজীবী। না হলে ফিরহাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হবে বলেও আইনি নোটিসে লেখা হয়েছে। একইসঙ্গে কলকাতা পুরসভার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি আমিরুদ্দিন ববিকেও নোটিস পাঠানো হয়েছে।
মিল্লি আল-আমিন কলেজ ফর গার্লস ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরজা বহুদিনের। তখনও তিনি বিজেপিতে যোগদান করেননি। সেই সময় থেকে এই কলেজে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সরগরম ‘শিক্ষা রাজনীতি’। এরপর বিজেপিতে পাকাপাকিভাবে বৈশাখী যোগ দেওয়ায় সেই তরজা-আগুনে ঘি পড়ে। বৈশাখীর দাবি, চলতি বছরের জুন মাসে তিনি এই কলেজের টিচার ইনচার্জের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরে চিঠি পাঠালেও কোনও উত্তর পাননি।
কয়েকদিন আগে কলেজের সামনে একটি বিক্ষোভ হয়। বৈশাখীর অভিযোগ, তাতে অংশ নিয়েছিল স্থানীয় কিছু লোকজন এবং কলেজ ছাত্রীদের একাংশ। রীতিমত প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, কলেজে এখনও কোনও পরীক্ষা হয়নি। চরম অব্যবস্থা চলছে। এবং সবকিছুর জন্য বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ফিরহাদ হাকিম কারও নাম না করেই বলেছিলেন, “মিল্লি আল-আমিন কলেজের টিচার ইনচার্জকে উপড়ে ফেলে দেওয়া উচিত।” ফিরহাদের এই বক্তব্যে ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। এরপরই বৈশাখী রাজভবনে যান। দেখা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের সঙ্গে। রাজ্যপালের সঙ্গে কথা সেরে বেরিয়ে রাজভবনের গেটে দাঁড়িয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বৈশাখী সেদিন প্রবল তোপ দেগেছিলেন ফিরহাদের বিরুদ্ধে। বলেছিলেন, কেউ তাঁকে উপড়ে ফেলতে চাইলেই উপড়ে ফেলতে পারবে না। শনিবারও বৈশাখী ফের বলেন, “আমাকে উপড়ে ফেলা যে অত সহজ নয়, সেটাই বুঝিয়ে দিতে চাইছি। এই আইনি লড়াই যতদূর টেনে নিয়ে যাওয়া দরকার, আমি নিয়ে যাব।”
বৈশাখীর কথায়, “ফিরহাদ ও আমিরুদ্দিন ববি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও চূড়ান্ত দায়িত্ব জ্ঞানহীনের মতো কাজ করেছেন। আমি একজন শিক্ষক এবং একজন মহিলা। তা সত্ত্বেও আমার সম্পর্কে অত্যন্ত অবমাননাকর মন্তব্য করে যেভাবে আমাকে জনসমক্ষে অপদস্থ করার চেষ্টা তাঁরা করেছেন সেটার একটা প্রতিবাদ হওয়া দরকার। শুধু অবমাননা করেই এরা থামেননি। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে আমাকে রাতারাতি বদলিও করা হয়েছে। এই পরিস্থিতির মুখে ভবিষ্যতে যাতে আর কাউকে পড়তে না হয়, তার জন্যই আমি এই আইনি পদক্ষেপ করলাম।” যদিও এ প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিম জানান, “আমি এখনও কোনও নোটিস পাইনি। নোটিস পেলে বক্তব্য দেব।”