আমাদের ভারত, ২১ মার্চ: এক বছর হতে চলল স্কুলে পানীয় জল নেই। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে শিশুদের মিড ডে মিলে মুড়ি চানাচুর দেওয়া হচ্ছে। পানীয় জল স্কুল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে আনতে হয়। ঝাড়গ্রামের ঘোড়াধরা এলাকায় নিউটাউনশিপ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ঘটনা সামনে আসতেই রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
এক বছর হতে চললো স্কুলের পানীয় জলের পাম্প খারাপ। গরম পড়েছে। ঝাড়গ্রামে তাপ প্রবাহ শুরু হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম শহরে সরকারি অনুদান প্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুলে জল নেই। যার ফলে মিড ডে মিলের রান্নার জল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শিশুদের পাতে ভাতের বদলে পড়ছে মুড়ি ও চানাচুর। আইসিডিএস কর্মীরা জানিয়েছেন, জলের সমস্যা প্রায় এক বছর ধরে চলছে। কমিশনারকে বলা হয়েছে, কোনো পদক্ষেপ করেননি কেউ। এই ঘটনার একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
দু’দিন আগেই তিনি রাজ্যের উচ্চশিক্ষার দূরবস্থা কথা জানিয়ে সরব হয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ব্যর্থতার কারণে রাজ্যের এক হাজারের বেশি কলেজ সহ ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে NAAC- এর স্বীকৃতি নেই। রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা সঙ্কটে। এবার প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েও তিনি সরব হলেন। সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ও শিক্ষা বিরোধী শাসনের কারণে বাংলার প্রাথমিক শিক্ষা ধ্বংসের মুখে। জঙ্গলমহলের স্কুলের শিশুরা মাসের পর মাস ধরে অনাহারে রয়েছে। পুষ্টিকর খাবার নেই, এমনকি সাধারণ ভাতও নেই। মিড-ডে মিলে শুধু মুড়ি ও চানাচুর দেওয়া হচ্ছে। এটাই বাংলার তথাকথিত “উন্নয়নের” বাস্তবতা।”
স্কুলে জল নেই, ফলে ১ কিলোমিটার দূর থেকে জল এনে অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীরা শিশুদের জন্য রান্না করতে বাধ্য হন। তার মধ্যে পুরসভার জল সব দিন আসে না। জলে টেনে আনতে আনতে তারাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ব্যস্ত সড়কের পাশেই এই প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশেই রয়েছে দুটি অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার। সবমিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৫০। ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম, ঝাড়গ্রাম থানা, বিডিও অফিসের মাঝে এই বিদ্যালয়। তবুও স্কুলের জল সমস্যা সমাধানে প্রশাসনে কোনো দপ্তর সচেষ্ট নয়। জেলা প্রশাসন, শিক্ষা দপ্তর, কাউন্সিলর সহ একাধিক জায়গায় জানানোর পরেও কোনো সমাধান হয়নি।প্রশাসনিক কোনো দপ্তর এই সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট নয় বলে আক্ষেপ করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকাও।
সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, “ঝাড়গ্রামের ঘোড়াধরা নিউ টাউনশিপ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন যে, পানীয় জলের সঙ্কটের কারণে প্রতিদিন রান্না করা সম্ভব হয় না। মিড-ডে মিলের রাঁধুনিরা দূর থেকে জল আনতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসন এবং স্কুল পরিদর্শকদের কাছে বারবার অভিযোগ করা হলেও কেউ কান দেয়নি তাতে।”
বিজেপি নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, “শিশুদের পুষ্টি এবং বিশুদ্ধ জলের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ কোথায় যাচ্ছে? ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাটমানির গ্যাং এবং দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট চুরি করছে? তৃণমূল নেতারা যখন বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন তখন স্কুল পড়ুয়ারা কেন কষ্ট পাচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ, “এই অবহেলা আসলে অপরাধ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার দরিদ্র শিশুদের জন্য কাজ করতেও ব্যর্থ হয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের পরিবর্তে তার সরকার তোষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে।
তিনি লিখেছেন, বাংলার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চায়, কতদিন ভুয়ো উন্নয়ন প্রচার করে আম জনতাকে বোকা বানাবেন মুখ্যমন্ত্রী? কতদিন জঙ্গলমহলের দুর্দশা উপেক্ষা করবেন তিনি?”