আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, শান্তিনিকেতন, ২১ মার্চ: করোনাকাল থেকে রবীন্দ্র আশ্রম ছিলো অবরুদ্ধ, অপ্রবেশ্য। এবার থেকে পর্যটকরা আশ্রম ক্যাম্পাসে ঘুরতে পারবেন। নতুন উপাচার্য প্রবীর কুমার ঘোষ শান্তিনিকেতনে কাজে যোগ দিয়ে এমন নির্দেশ দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অচলায়তনের বিরুদ্ধে ছিলেন। প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমলে সেই অচলায়তন পরিপূর্ণতা পায়। কার্যত এক দুর্গের রূপ পায়। নতুন উপাচার্য এসে সেই অচলায়তন ভেঙে দিলেন বলে মনে করছেন প্রবীন আশ্রমিকরা। সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুপ্রিয় ঠাকুরের মত প্রবীন আশ্রমিকরা একে স্বাগত জানান।
সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বর্তমান উপাচার্য এবং আমি একই এগ্রিকালচারাল কলেজের ছাত্র। তিনি আমার থেকে দশ বছরের জুনিয়ার। খুব ভালো লাগছে, তিনি এই কথা বলেছেন। পর্যটনকে এই হেরিটেজ সাইটের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। পাঁচিল দিয়ে অবরুদ্ধ করা সহজ, কিন্তু রবীন্দ্র ভাবনার উন্মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন। যেমন, ছাত্রদের যেমন এখানে রবীন্দ্র স্টাডিজ পড়তে হয়, কিন্তু যারা এখানে বাইরে থেকে পড়াতে আসেন তাদেরকে তা পড়তে হয় না। একথা প্রাক্তন উপাচার্য সুজিত বসুকে বলেছিলাম। সব থেকে যেটা দরকার উপযুক্ত পরিকাঠামো। পর্যটকদের জন্য পার্কিং ব্যবস্থা, বাথরুম। কোথায় পার্কিং হবে, কোথায় হবে না তার নোটিশ দরকার। নোংরা হবে বলে, কাউকে ঢুকতে দেব না, তালা মেরে দেব, এটা সহজ কথা। হেরিটেজ সাইট মানুষকে দেখতে দিতে হবে। ৬ বছর পর পর্যটকদের জন্য খুলে গেল বিশ্বভারতীর সমস্ত এলাকা। তাতে বিভিন্ন মহলে খুশির হাওয়া।
শুক্রবার শান্তিনিকেতনে ঘুরতে আসা পর্যটক পাপিয়া সাঁতরা এবং বৈশাখী সর্বজ্ঞ বলেন, খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। আরও আগে হলে ভালো হতো। আমরা সব কিছু ঘুরে দেখতে চাই। ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। এই ‘হেরিটেজ’ তকমা রক্ষা করতে অতি সতর্ক বিশ্বভারতী এতদিন পর্যটক থেকে সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছিল। এবার সবার জন্য আশ্রমের দরজা উন্মুক্ত হলো। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি যথাযথ থাকবে।
শুক্রবার “শান্তিনিকেতন আ ইউনেসকো ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট ট্যুরিজম” বিষয়ে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাপানের ভারপ্রাপ্ত কনসুল জেনারেল আসিদা কাসশুনরি, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক মীর আব্দুল সফিক সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট জন। এদিনও স্থায়ী উপাচার্য প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, একটি পরিকল্পনা করে হেরিটেজ সাইটের সঙ্গে ট্যুরিজম লিঙ্ক আপ করা হবে। অবশ্যই নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। তবে রবীন্দ্র ভাবনা তাঁর আদর্শ এবং স্থান ঐতিহ্যকে মানুষের কাছে আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে আশ্রম উন্মুক্ত করা হবে। গত পরশু জয়েন করে আমি জানিয়ে দিয়েছি। অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি বা অতীতের মতো যে তিনি চলবেন না, তাঁর প্রথম সিদ্ধান্তে তিনি তা বুঝিয়ে দিলেন। স্বাভাবিক ভাবে বিশ্বভারতী তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চলেছে।
উল্লেখ্য, উত্তরায়ণ কমপ্লেক্স আশ্রমের হৃদয়ঘর। এখানে আছে শ্যামলী, কোনার্ক, পুনশ্চ, উদীচি এবং উদয়ন। এই কমপ্লেক্সে উদয়ন এবং কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ তৈরী গুহাগৃহ আছে। তিরিশের দশকে তৈরী এই বাড়িগুলির প্রতিটির আলাদা বিশেষত্ব আছে। পর্যটক দেখবে, জানবে কেমনভাবে প্রকৃতির কোলে উন্মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা দান হতো।