আমাদের ভারত, ১৯মে: ট্রাম্প যতই দাবি করুক ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতিতে আমেরিকার কোনো ভূমিকা ছিল না। দু’দেশের মধ্যে সংঘাত দীর্ঘ দিনের হলেও সেই সংঘাত ছিল নিয়ন্ত্রিত। ফলে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও প্রতিবেশী দেশের তরফে কোনো পরমাণু হামলার ইঙ্গিত ছিল না। সোমবার সংসদীয় কমিটিতে এমনটাই জানিয়েছেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি বলে সূত্রের খবর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এতদিন ধরে যে দাবি করছিলেন দু’ দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করার, তা একরকম উড়িয়ে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। পেহেলগাঁও হামলার বদলা নিতে ৬ মে মাঝ রাতে জঙ্গিদের আঁতুরঘর পাকিস্তানে আঘাত হানে ভারতীয় সেনা অপারেশন সিঁদুর। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। এর পাল্টা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। তাদের ড্রোন হামলা প্রতিহত করে ভারতের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ভারতের মারে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আক্রমণ থামানোর আর্জি জানিয়েছিল পাকিস্তান। তারপর সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড বন্ধ করার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ইসলামাবাদের কাকুতি মিনতিতে সাড়া দেয় দিল্লি। ১০ মে সম্মতি জানানো হয় যুদ্ধ বিরতিতে।
কিন্তু ঐদিন ভারতের তরফে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার আগেই ট্রাম্প নিজে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে জানিয়েছিলেন, আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘ কথা বলার পর ভারত- পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতিতে যেতে রাজি হয়েছে। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশকে চাপ দিয়ে সংঘর্ষ বিরতি করেছেন। যুদ্ধ না থামলে বাণিজ্য চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তাতেই কাজ হয়েছে। তার সেই একই রেকর্ড বাজিয়ে গত শুক্রবারেও ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমার সরকার ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি করিয়েছে। যা হয়েছে তার জন্য আমরা খুব খুশি। ভারত আর পাকিস্তান একে অপরের প্রতিবেশী। দু’জনের মধ্যে এত রাগারাগি ঠিক নয়। আপনি যদি দু’ দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ দেখেন আপনারও তাই মনে হবে। এটা আমেরিকার বড় জয়।
আজ এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। বিদেশ সচিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এখনো পর্যন্ত ট্রাম্প সাতবার দাবি করলেন ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতির করানোর। কেন্দ্র কেন এই বিষয়ে চুপ করে রয়েছে? কেন ভারত একই দাবি বারবার করার সুযোগ দিচ্ছে ট্রাম্পকে। তিনি নিজের বক্তব্যে কেন কাশ্মীরকে টেনে আনছেন।
সূত্রের খবর, এর উত্তরে বিক্রম মিশ্রি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি হয়েছে কূটনৈতিক আলোচনার মধ্যে দিয়ে। এখানে কোনো তৃতীয়পক্ষ হস্তক্ষেপ করেনি। যুদ্ধ বিরতিতে আমেরিকারও কোনো দিক থেকে কোনো ভূমিকা ছিল না।
অতীতে একাধিকবার কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। এবার পেহেলগাঁও হামলার পর ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, ভারত আর পাকিস্তান দু’জনেই আমার কাছের বন্ধু। কাশ্মীর নিয়ে তাদের লড়াই ১ হাজার বছর ধরে চলে আসছে। এ লড়াই আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে। এছাড়া ঐ সীমান্তে পনেরশো বছর ধরে উত্তেজনা তৈরি হয়ে আছে। এই নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। কিন্তু এদিন বিদেশ সচিবের কথায় স্পষ্ট হয়ে গেল, নিজেদের সমস্যার সমাধান ভারত নিজেই করতে পারে। তার জন্য কোনো বন্ধুর প্রয়োজন পড়ে না।