People’ Ear, “কানের ব্যাপারে আমজনতার সচেতনতা কম”, মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের

আমাদের ভারত, ৩ মার্চ: কানের ব্যাপারে আম জনতার সচেতনতা তুলনামূলক অনেকটাই কম। সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই মন্তব্য করলেন ‘দ্য অ্যাসোশিয়েশন অফ অটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট অফ ইন্ডিয়া’ (এওআই)-র বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হিসেবে এই মুহূর্তে পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি মানুষের কানে শোনার সমস্যা আছে। এর মূলে আছে হেড ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে শুরু করে শব্দ দূষণ এবং কিছু ক্রনিক কানের অসুখ। শ্রবণেন্দ্রিয় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ৩ মার্চ দিনটিকে ওয়ার্ল্ড হিয়ারিং ডে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘হু’।

এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্যোক্তারা বলেন, উন্নত প্রযুক্তির চিকিৎসায় কানের অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। ভারতীয় ইএনটি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় প্রেসিডেন্ট ইএনটি সার্জেন ডা: দ্বৈপায়ন মুখার্জি জনগণকে শ্রবণ শক্তি সস্পর্কে সচেতন হয়ে ‘বিশ্ব শ্রবণ দিবস’ পালনের আহ্বান জানান।

দ্বৈপায়নবাবু জানান, মানুষের জীবনে দেখার মতো শোনাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর একবার যদি শ্রবণক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় তাকে আগের অবস্থায় আনা প্রায় অসম্ভব। হিয়ারিং এড বা ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টের সাহায্যে স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি ফেরানো মুশকিল। তাই শুধু শিশুদের নয়, সকলেরই স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি বজায় রাখতে সচেতন থাকা উচিৎ।

অতিরিক্ত হেড ফোন ব্যবহার কানে শোনার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির এক অন্যতম কারণ। নাগাড়ে হেড ফোন, ইয়ার ফোন জাতীয় জিনিস কানে গুঁজে রাখলে সাময়িক ভাবে কানে শোনার উপলব্ধি ও তীক্ষ্ণতা কিঞ্চিৎ কমে যায়। এরকম হতে হতে ক্রমশ শ্রবণ ক্ষমতা স্থায়ী ভাবে কমতে শুরু করে, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে এই ব্যাপারটা চট করে বোঝা মুশকিল।”

ডা: মুখার্জি জানান, হেডফোন না ব্যবহার করাই ভাল, তবে একান্ত প্রয়োজন হলে টানা ২ ঘন্টার বেশি হেড ফোন ব্যবহার উচিৎ না। এই নিয়ম না মানলে অডিটরি নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি সকলকে এবিষয়ে সচেতন হয়ে স্বাভাবিক শ্রবণশক্তির অধিকারী হতে আহ্বান জানান।

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গেছে যে, ২০২০ সালে ভারতবর্ষে কমবেশি ১৮২.৪ মিলিয়ন (১৮ কোটির বেশি) মানুষ হেড ফোন ব্যবহার করতেন। ২০২৫- এর শেষে তা বেড়ে দাঁড়াবে ২৪৪.৮ মিলিয়ন (প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি)। এই প্রেক্ষিতে হেড ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিৎ বলে জানালেন ইএনটি সার্জন ডা: উৎপল জানা।

এওআই-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার কোষাধ্যক্ষ ডা: স্নেহাশিষ বর্মন বলেন, এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেসের পক্ষ থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সংস্থার অধিকর্তা প্রোফেসর ডা: অতুল গোয়েল জানান, সার্কুলারটিতে প্রত্যেক রাজ্য সরকার, মেডিক্যেল কলেজ, ইএনটি চিকিৎসক সংগঠন সহ প্রত্যেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতন হবার আহ্বান জানিয়েছেন।

এওআই-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক ডা: অজয় কুমার খাওয়াস জানান যে, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে হেডফোন, ব্লুটুথ, ইয়ার প্লাগ ব্যবহার অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় যুবসমাজের মধ্যে বধিরতার ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। ওয়ার্ল্ড হিয়ারিং ডে-তে কানে শোনার ব্যাপারে সচেতন হতে হেডফোন ব্যবহারে কিছু নিয়ম মেনে চলার আবেদন করা হয়েছে, একই সঙ্গে নিয়মিত কান পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

হেডফোন ও ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার প্রসঙ্গে নির্দেশিকাটি হল– * নাগাড়ে হেডফোন ব্যবহার করার ব্যাপারে নিরস্ত করতে হবে, কেননা এর থেকে সাময়িক ও পরবর্তীতে সম্পূর্ণ ভাবে বধিরতার ঝুঁকি থাকে।

*নিতান্ত প্রয়োজনে ৫০ ডেসিবলের কম মাত্রার শব্দ কম্পাঙ্ক যুক্ত হেড ফোন ব্যবহার করা উচিৎ।

*টানা ২ ঘন্টার বেশি হেড ফোন ব্যবহার চলবে না, এর মধ্যে মাঝে মাঝে ব্রেক নিতে হবে।

*মানানসই মাপের হেডফোন লো ভলিউমে চালিয়ে শোনা ভাল।

*বাচ্চাদের টিভি দেখার সময়সীমা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিৎ, নইলে মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যহত হবে এবং বাচ্চার আচার আচরণ অস্বাভাবিক থাকবে।

*ছোটদের অনলাইন গেম খেলার ব্যাপারে নজর দিতে হবে, বিশেষত উচ্চস্বরে যে সব গেম খেলা হয় সেগুলির শব্দ ও সময়সীমা নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ।

*সামাজিক মাধ্যমে কম সময় দিয়ে পরিবারকে বেশি সময় দিলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়।

*বড়সড় ইভেন্ট হোক বা মাঝারি ধরণের, ইভেন্ট ম্যানেজারকে নির্দেশ দিতে হবে যে শব্দ যেন ১০০ ডেসিবল মাত্রা না ছাড়ায়। ইভেন্ট হোক বা ডিজে শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী।

*নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি কান পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিৎ।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এওআই-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক ডা: অজয় কুমার খাওয়াস, কোষাধ্যক্ষ ডা: স্নেহাশিষ বর্মন ও দেশের প্রথম সারির কয়েকজন ইএনটি চিকিৎসক। সম্নেলনের মঞ্চ থেকে চিকিৎসকেরা সাধারণ মানুষকে নিজেদের শ্রবণ ক্ষমতা সুরক্ষার সম্পর্কে সচেতন হতে বার্তা দেন। তাঁরা বলেন উপরের নির্দেশিকা মেনে চললে একদিকে যেমন বধিরতার সমস্যা কমবে অন্যদিকে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতা সুরক্ষিত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *