আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ৫ জানুয়ারি: এবার তারাপীঠ মন্দিরে অল ইন্ডিয়া লিগ্যাল এইড ফোরামের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়কে হেনস্থার অভিযোগ উঠল সেবাইতদের বিরুদ্ধে। জেলা শাসকের বেঁধে দেওয়া নিয়মাবলীর দোহাই দিয়ে তাকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ জয়দীপবাবুর। তারাপীঠ মন্দির কর্তৃপক্ষের স্বঘোষিত নিয়মাবলীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়।
তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে মারধর ও হেনস্থার অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘদিন ধরেই। সমাজ মাধ্যমে কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মোবাইলে মোবাইলে। বিষয়টি নজরে আসতেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকে মন্দির কমিটিকে সতর্ক করেন জেলা শাসক বিধান রায়। এরপরেই গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে তারাপীঠ মন্দিরে বেশ কিছু নিয়ম চালু করেছে তারা মাতা সেবায়েত সংঘ। সেখানে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের দুটি লাইন করা হয় একটি সাধারণের জন্য, অন্যটি ৫০০ টাকা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য। অবশ্য ভিআইপিদের জন্য কোনো লাইনের তোয়াক্কা না করে সরাসরি মায়ের গর্ভগৃহে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। শনিবার দুপুরে নিয়মের কড়াকড়িতে হেনস্থা হতে হয় অল ইন্ডিয়া লিগ্যাল এইড ফোরামের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়কে।
অভিযোগ, বামাপদ মুখোপাধ্যায় ওরফে রবি নামে এক সেবাইত নিজেকে মন্দিরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচয় দিয়ে জয়দীপবাবুকে হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। সেই নিয়মকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, তারাপীঠ মন্দিরে যে কমিটি রয়েছে সেই কমিটিতে কোনো নির্বাচন করা হয় না। একই ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে একই পদে বহাল রয়েছেন। সেই কমিটিই নিজেদের ইচ্ছেমত ও খামখেয়ালিভাবে যখন তখন যে কোনো ধরনের নিয়ম চালু করেছে। অথচ তারাপীঠ মন্দিরে ভক্তদের দেওয়া লক্ষ লক্ষ টাকার সোনা, রুপোর গহনা ও অনুদানের কোনো হিসেব নেই। ভক্তদের দেওয়া অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করছেন সেবাইতরা। তিনি বলেন, “নতুন নিয়মের কোনো রেজুলেসন দেখাতে পারেনি মন্দির কমিটি। তাছাড়া ৫০০ টাকার লাইন করার অনুমতি কে দিয়েছেন? সেবাইতরা মা তারাকে শুধুমাত্র আয়ের উৎস করে তুলেছেন। এক সময় আমি পরিবেশ আদালতে মামলা করে তারাপীঠের দূষণ নিয়ে সরব হয়েছিলাম। পরিবেশ আদালত তারাপীঠকে স্বচ্ছ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনও পালন হয়নি। এবার মন্দিরের খামখেয়ালি নিয়মের প্রতিবাদে মামলা করব। খুব শীঘ্রই রবি মুখোপাধ্যায় সহ মন্দির কমিটিকে চিঠি পাঠানো হবে”।
জয়দীপবাবুর দাবি, অবিলম্বে বীরভূম জেলা শাসকের মাধ্যমে নির্বাচন করে কমিটি গঠন করুক। যতদিন না সেই কমিটি গঠন হচ্ছে ততদিন হাইকোর্ট তারাপীঠ মন্দিরে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করুন।
বর্তমানে মন্দিরের দায়িত্বে থাকা বামাপদ মুখোপাধ্যায় ওরফে রবি বলেন, “উনি নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। আমরা উনার বিরুদ্ধে তারাপীঠ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি”। যদিও তারাপীঠ থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পুন্যার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়ার বিষয়ে রবিবাবু বলেন, “ওটা বিশেষ লাইন। ওই টাকা নেওয়া হয় মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। তাছাড়া মন্দিরের গোশালা রয়েছে। সেই গোশালায় ৩৫টি গরু রয়েছে। তাদের দেখভাল, নিরাপত্তারক্ষীদের সাম্মানিক দিতেই ওই টাকা খরচ হয়ে যায়”।
যদিও জেলা শাসক বিধান রায় ফোন না ধরায় তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।