আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২০ মার্চ: ফের হুমকি সংস্কৃতি। এবার বীরভূমের রামপুরহাট গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা। হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের যুব নেতা ওয়াসিম আলি ভিক্টরের বিরুদ্ধে। খোদ কর্মরত অবস্থায় দফতরে ঢুকে মেডিক্যাল কলেজের অতিরিক্ত মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট ঈশ্বর চট্টোপাধ্যায়কে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে সুত্রের খবর। ঘটনার পরেই ঈশ্বরবাবু স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন বিভাগে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ওয়াসিম আলী ভিক্টরকে সঙ্গে নিয়ে এসে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল হাসপাতালের একজন বেসরকারী সংস্থার কর্মীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর আতঙ্কে রয়েছেন অ্যাডিশনাল এমএসভিপি। বিষয়টি জানিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সহ স্বাস্থ্য দফতরের ১০টি জায়গায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত ১৭ মার্চ বিকেলে। ওইদিন রামপুরহাট গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী বিকি শেখকে সঙ্গে নিয়ে অতিরিক্ত মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট ঈশ্বর চট্টোপাধ্যায়কে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকি শেখ নিয়ম মেনে ডিউটি করেন না। পোশাক বিধি মানেন না। পরিচয়পত্র ঝোলান না। এনিয়ে মাসখানেক আগে বেসরকারি কোম্পানিকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ঈশ্বরবাবু। তাতেও কোম্পানি কর্ণপাত না করায় তিনি ফের দিন তিনেক আগে দ্বিতীয়বার চিঠি পাঠান। এরপরেই সোমবার বিকি শেখকে সঙ্গে নিয়ে অতিরিক্ত মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্টের অফিসে ঢুকে তৃণমূল নেতা ওয়াসিম আলি ভিক্টর হুমকি দেন বলে অভিযোগ।
ঈশ্বরবাবু বলেন, “বিকি শেখ নামে বেসরকারি কোম্পানির একজন ‘ওয়ার্ডবয়’ রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকে সময় মতো পাওয়া যায় না। পরিচয় পত্র ঝোলায় না। পোশাক পরে না। আমি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এরপরেই মাসখানেক আগে বেসরকারি কোম্পানিকে একটি চিঠি পাঠাই বিকির কাজকর্ম নিয়ে। কিন্তু কোম্পানি কোনো পদক্ষেপ করেনি। এরপর সোমবার দুপুরে ফের কোম্পানির মেইলে আরেকটি চিঠি পাঠাই। তার দুই ঘণ্টা পর ভিক্টর বিকিকে সঙ্গে নিয়ে আমার অফিসে আসেন। উনি ক্রোধান্বিত হয়ে বলেন, ‘বিকি শেখের বিষয়টি নিয়ে আপনি খুব বাড়াবাড়ি করছেন। আপনি বাড়াবাড়িটা বন্ধ করুন। না হলে হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা হলে আপনি দায়ী থাকবেন”।
এই হুমকির জন্য বেসরকারি কোম্পানির মদত রয়েছে বলে মনে করেন অতিরিক্ত মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট ঈশ্বর চট্টোপাধ্যায়। সেই জন্য তিনি মঙ্গলবার বেসরকারি কোম্পানিকে ফের আরেকটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে ঈশ্বরবাবু লিখেছেন, “আপনাদের দফতরে চিঠি পাঠানোর দুই ঘণ্টা পর ভিক্টরবাবু অফিসে এসে হুমকি দিয়ে গিয়েছেন। ফলে আমার বিশ্বাস এই ঘটনার সঙ্গে আপনাদের মদত রয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন আপনাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তিনদিনের মধ্যে তার কারণ দর্শাতে হবে।”
ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ঈশ্বরবাবু। তিনি বলেন, “আমি বীরভূমের লোক নই। ফলে আতঙ্কে রয়েছি। তাছাড়া আর জি কর কাণ্ডের পর পুলিশ ডাক্তারবাবুদের আশ্বাস দিয়েছিল হাসপাতালে কোনরকম গুণ্ডামি বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আমি বেসরকারি কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। কারণ ভিক্টরবাবুর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। স্থানীয় লোক বলে জানি। কোম্পানির লিখিত উত্তরের অপেক্ষায় আছি। বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন বিভাগে জানিয়েছি। হুমকি সংস্কৃতির কারণে আমি চাইছি বেসরকারি কোম্পানিকে কাল তালিকা ভুক্ত করা হোক। বিকি শেখের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
যদিও এনিয়ে মুখ খুলতে চাননি ওয়াসিম আলি ভিক্টর।