সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৮ ফেব্রুয়ারি: আগে থেকে সব কিছু জানতেন ওই তরুণী। ধৃত বিষ্ণুপদ মণ্ডলের সঙ্গে গর্ভনিরোধকের সাহায্য নিয়ে যৌন সম্পর্কও ছিল। আর এ সব কিছু জানতেন তাঁর স্ত্রী রণিতাও। চাকরি এবং টাকার বিনিময়ে বাঘাযতীনের ই-ব্লকের ওই নিঃসন্তান দম্পতির গর্ভদাত্রী মা হতেও রাজি হয়েছিলেন। এখন চাকরি পেয়ে গিয়ে টাকার দাবি মনপসন্দ না হওয়ায় উলটে তাদেরই ফাঁসাচ্ছেন।
বাঘাযতীনের ই-ব্লকের স্ত্রীর সাহায্যে এক তরুণীর ধর্ষণের ঘটনার পর পুলিশের কাছে এমন দাবিই করলেন ওই অভিযুক্ত দম্পতি। সোমবারই তাদের আদালতে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। তারপরই অভিযুক্তরা দৃঢ়তার সঙ্গে এই দাবি করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রবিবারই বাঘাযতীন এই ব্লগের এই দম্পতির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন নির্যাতিতা তরুণী। সোমবার অভিযুক্ত দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযুক্ত দম্পতির দাবি, ওই তরুণী অন্য এক মহিলার সাহায্যে তাদের ফ্ল্যাটে আসেন। সেখানে তরুণী তাদেরকে চাকরি জোগাড় করে দেওয়ার কথা জানালে ওই দম্পতিও কথাচ্ছলে বিয়ের ৫ বছর পরেও তাদের নিঃসন্তান হওয়ার কথা জানান। তখন নাকি ওই তরুণীই বলেন, “আপনারা চিন্তা করবেন না, আমি আপনাদের কোল আলো করে দেব। কিন্তু এর বদলে চাকরি ছাড়াও আমার কিছু টাকাও চাই।” আশার আলো দেখতে পেয়ে সেই টাকা দিতে রাজিও হয়ে যান ওই দম্পতি।
রণিতার দাবি, যেহেতু ওই তরুণী নিজে থেকেই এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেইহেতু কোন লিখিত চুক্তির তারা প্রয়োজন বোধ করেননি। হয়তো সেটাই তাদের ভুল হয়েছিল । তারা তরুণীর দাবিমতো সমস্ত রকম সাহায্য করেন। চাকরি ছাড়াও যে টাকা তিনি দাবি করেছিলেন, তার বেশ কিছুটা টাকা দেওয়া হয়েও যায়। প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পর যৌন-অভিজ্ঞতা স্বাভাবিক করতে গর্ভনিরোধকের সাহায্যে তার স্বামী বিষ্ণুপদর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনও করেন ওই তরুণী, এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ জানিয়েছেন পুলিশকে।
ওই দম্পতির আরও দাবি, চাকরি পেয়ে যাওয়ার পরে আচমকা রং বদলে যায় ওই তরুণীর। নির্দিষ্ট টাকার থেকেও আরো বেশি টাকা দাবি করতে থাকে সে। এই নিয়ে কথা বলতে ৯ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীকে ডাকা হয়। সেই সময় স্ত্রী রণিতা বাড়িতে ছিলেন না। রণিতা আসার আগে আরও একবার বিষ্ণুপদর ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন ওই তরুণী। কিছুক্ষণ পরেই রনিতা বাড়ি ফিরে তাদের ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখলেও আগে থেকে এই সমস্ত কিছু জানা থাকার ফলে তিনি বাধা দেননি। কিন্তু তারপরেই ওই তরুণী তাদের সঙ্গে টাকা বেশি নেওয়া সংক্রান্ত বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন। এরপরেই পাটুলি থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেন। তরুনীর মেডিক্যাল টেস্ট করলেই সমস্ত কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
যদিও নির্যাতিতা তরুণীর দাবি, বিপদে পড়ে এখন তাঁকে মিথ্যা বদনাম দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন ওই দম্পতি। যেভাবে তাঁর চরিত্রের দিকে কালি ছেটানো হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। গর্ভদাত্রী মা হওয়ার কোনও কথাই হয়নি। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, যেহেতু কোনো লিখিত চুক্তি হয়নি, সেই দিক দিয়ে দেখলে আইনি সহায়তা রয়েছে তরুনীর পক্ষেই। তবুও সমস্ত দিক বিবেচনা করে এবং দম্পতির বয়ান যাচাই করে নিরপেক্ষ ভাবে তদন্তে এগোতে চাইছে পুলিশ। তরুণীর সঙ্গেও এই নিয়ে বিস্তারিত কথা বলা হবে। বিষয়টি ধর্ষণ নাকি সম্মতিক্রমে যৌন সম্পর্ক, তা জানার জন্য মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট এর অপেক্ষা করছেন তদন্তকারীরা।