সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৩ জুলাই: ফের হাতির হানায় এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বড়জোড়া রেঞ্জ এলাকায়। গতকাল রাতে বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের বড়জোড়া রেঞ্জ এলাকার খাঁড়ারি গ্রামের মণ্ডল পাড়ায় হাতি হানা দেয়।হাতির হানায় গৃহস্থের বাড়ির দেওয়াল ভেঙ্গে দেওয়াল চাপা পড়েন বাসন্তী মন্ডল (৫৬)। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার পর খাঁড়ারি গ্রাম সহ লাগোয়া হাতি উপদ্রুত গ্রামগুলির বাসিন্দারা বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন। তাদের অভিযোগ, বন কর্তাদের গাফিলতি এবং উদাসীনতার কারণে বড়জোড়া, বেলিয়াতোড়, গঙ্গাজলঘাঁটি, সোনামুখী ব্লকের জঙ্গল লাগোয়া
গ্রামগুলির বাসিন্দারা ঘরে- বাইরে নিরাপদ নন। এই গ্রামেরই বাসিন্দা তৃণমূল নেতা তথা বড়জোড়ার প্রাক্তন বিধায়ক আশুতোষ মুখার্জিও আশঙ্কিত বুনো হাতির অত্যাচার এবং বারংবার গরিব মানুষের প্রাণহানির ঘটনায়।
অন্যদিকে এনিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন হাতি সমস্যা সমাধানের জন্য গড়ে তোলা সংগঠন সংগ্রামী গণমঞ্চের কর্ম কর্তারা। মৃতার ভাসুরপো সুজয় মণ্ডল জানান, রাত ২টো নাগাদ তাদের পাড়ায় ৪টি জংলি দাঁতাল হাতি ঢোকে। একটি দাঁতাল তাদের উঠোনে ঢুকে পড়ে। তার কাকার মাটির বাড়ির ভিতরে কাকিমা
শুয়ে ছিলেন। হাতিটি সেই ঘরের দেওয়াল ঠেলা দিতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ে। পুরো দেওয়ালটি কাকিমার খাটের উপরেই পড়ে। তাতে চাপা পড়েন তিনি। সুজয়বাবু বলেন, আমরাও সব ঘুমিয়ে ছিলাম। কাকু, কাকিমার চিৎকারে ঘুম ভেঙে এসে দেখি হাতিটি তখনও উঠোনে দাঁড়িয়ে। ভয়ে ভয়ে কাকিমার ঘরে গিয়ে দেওয়াল সরিয়ে তাকে বের করে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
গণমঞ্চের সভাপতি পূর্ণেন্দু সরকারের অভিযোগ, আমরা বন কর্তাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে জেনে আসছি এবার ময়ূরঝর্ণা প্রকল্পের রূপায়ণ করে স্থায়ী ভাবে হাতি সমস্যার সমাধান হবে। রাজ্য বন মন্ত্রকের কর্তারা বছরে বেশ কয়েকবার এনিয়ে বাঁকুড়ায় এসে বেলিয়াতোড় বন বাংলোয় বসে পরিকল্পনা করেন। তারপর রাজশাহী খানাপিনা করে ফিরে যান, আর বড়জোড়া বেলিয়াতোড়ের মানুষ প্রাণ হাতে নিয়ে বাইরে বের হন আবার প্রাণ হাতে নিয়ে ঘুমোতে যান। বাঁকুড়ার জঙ্গলে হাতি থাকুক। কিন্তু তারা যেন জঙ্গলের বাইরে এসে লোকালয়ে হামলা না চালায়। হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে এবার বন দফতরের জেলা কার্যালয় ঘেরাও করে লাগাতার আন্দোলন হবে বলে জানান সংগ্রামী গণমঞ্চের জেলা সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখার্জি।
বড়জোড়ার রেঞ্জ অফিসার মহম্মদ সফিউর রহমান বলেন, ফের হাতির হানায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি এই মুহূর্তে এলাকায় যে ৬টি হাতি রয়েছে সেগুলির দিকে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।”