Accident, Tamluk, মর্মান্তিক! তমলুকে বেপরোয়া গতির বলি ৪, আশঙ্কাজনক ১

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ২৭ অক্টোবর: হঠাৎই বিকট শব্দ। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাধিক মানুষের রক্তাক্ত দেহ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ। হারিয়ে গেল ৪টি তরতাজা প্রাণ। মেছেদা থেকে দিঘা গামী ১১৬ নং জাতীয় সড়কে তমলুকের ভান্ডারবেড়িয়া এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রাইভেট গাড়ির যাত্রী এক মহিলা ও গাড়ির চালক। এছাড়াও এই ঘটনায় স্থানীয় দুই সাইকেল আরোহীরও মৃত্যু হয়েছে। মৃত দুই সাইকেল আরোহীর নাম রাজেন্দ্র সামন্ত ও প্রশান্ত রায়। এঁরা সকলেই ভান্ডার বেড়িয়ার বাসিন্দা। প্রাইভেট গাড়ির ২ আরোহী ঘাটালের বাসিন্দা বলে প্রাথমিক ভাবে জানাগেছে। তবে এদের নাম এখনও জানা যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার ঘাটাল থেকে প্রাইভেট গাড়িটি চড়ে দিঘায় যাচ্ছিলেন এক মহিলা ও গাড়ির চালক। গাড়িটি জাতীয় সড়ক ধরে তমলুকের নিমতৌড়ি ঢোকার সামান্য আগে ভান্ডারবেড়িয়ার কাছে নিয়ন্ত্রণ হারায়। গাড়িটি প্রথমে অন্য একটি চলন্ত গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় বলে স্থানীয়দের একাংশের দাবি। সেই সময় ৩ যুবক সাইলেক চড়ে রাস্তার পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। প্রাইভেট গাড়িটি সেই সময় ওই সাইকেল আরোহীদের পিষে দেয়। তারপর সেটি ধাক্কা মারে রাস্তার পাশের একটি গাছে। এরপর নয়ানজুলিতে গাড়িটি উলটে পড়ে।

এই ঘটনায় প্রাইভেট গাড়ির দুজনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। এছাড়াও দুই সাইকেল আরোহীরও মৃত্যু হয় দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই। অন্য এক সাইকেল আরোহীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তমলুকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে প্রাইভেট গাড়ির ইঞ্জিন ছিটকে গিয়েছে বেশ খানিকটা দূরে। গাড়ির একাধিক টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে চারিদিকে। সেই সঙ্গে গোটা গাড়িটাই দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে।

ঘটনার খবর পেয়েই তমলুক থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মৃত ও আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিকেও উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে তমলুক থানা সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মৃত প্রশান্ত রায় কলকাতায় কাজ করেন। আর রাজেন্দ্র সামন্ত পেশায় হকার। তাঁরা স্থানীয় একটি মুড়ি মিল থেকে বেরিয়ে দলবেঁধে বাড়ির পথ ধরেছিলেন। তবে তার আগেই সব শেষ।

স্থানীয় কুলবেড়িয়ার বাসিন্দা ভোলানাথ ঘোষ জানান, “প্রাইভেট গাড়িটি প্রচন্ড গতিতে ছুটে যাচ্ছিল দিঘার দিকে। আচমকা সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে রাস্তার ধারে ছিটকে পড়ে। সেই সময় কলকাতায় বেসরকারি পার্কিং সংস্থায় কর্মরত প্রশান্ত রায় এবং পেশায় হকার রাজেন্দ্র সামন্ত সহ ৩ জনকে একসঙ্গে ধাক্কা মারে গাড়িটি। সকলেই রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছিটকে পড়ে চিৎকার করতে থাকে। অন্যদিকে গাড়িটি গাছে ধাক্কা খেয়ে উলটে গেলে মহিলা ও গাড়ির চালক সেখানেই আটকে পড়ে। পরে মহিলার দেহ উদ্ধার করা গেলেও চালকের দেহ সহ গাড়িটি নিয়ে পুলিশ তমলুক থানায় চলে যায়।

পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত ওই গাড়ির চালকের নাম ভাস্কর মোদক। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কোন্নগর কয়েততলার মাঠ এলাকায়। পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভাস্কর শনিবার সন্ধে প্রায় সাড়ে ৬টা নাগাদ নিজের গাড়ি নিয়ে দিঘার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাতেই ভাস্করের পরিবার তমলুকে গিয়ে ভাস্করের দেহ শনাক্ত করেছে। তবে ভাস্করের সাথে ওই গাড়িতে থাকা মহিলার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *