Shahriar Kabir, Bangladesh, মৌলবাদের বিরুদ্ধে সরব হওয়া শাহরিয়ার কবিরের মুক্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি বিশ্বের ৩০ জন বিশিষ্টের

আমাদের ভারত, ২৫ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশের অন্যতম পরিচিত লেখক, সাংবাদিক, তথ্যচিত্র পরিচালক তথা মানবাধিকার কর্মী শাহারিয়ার কবিরকে গ্রেফতারের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্বের ৩০ জন বিশিষ্টজন বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন, ইরান, পর্তুগাল, তুরস্ক, কম্বোডিয়া, সুইডেন, পোল্যান্ড, ইউকে, আর্জেন্টিনা, সুইজারল্যান্ড, গ্রীস, কানাডা, ভারত, জার্মানি, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জাম্বিয়ার মতো দেশের লেখক, আইনজীবী, শিক্ষক ও সাংবাদিকরা। মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মহম্মদ ইউনিসের কাছে পাঠানো চিঠিতে তারা শাহরিয়ার কবিরের মুক্তি দাবি করেছেন।

লেখক তথা মানবাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবির বরাবর মৌলবাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের হয়ে কথা বলেছেন। তাই জামাতের কখনোই তাকে পছন্দ ছিল না। এর আগেও তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। এখন খুনের অপবাদ দিয়ে তাকে জেলবন্দি করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মহম্মদ ইউনিসের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিশিষ্টরা শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তারের নিন্দা করে তাঁর মুক্তির দাবি করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য সাংবাদিক, লেখক, নির্মাতা এবং সর্বোপরি একজন আপোষহীন ব্যক্তি। তাঁকে গ্রেফতারের বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী শাহরিয়ার কবিরের সঙ্গে আচরণ করতে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। বলা হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের বিষয়ে আমরা অবগত। ৭৩ বছর বয়সী শাহরিয়ার কবিরকে একটি কাল্পনিক রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হয়েছে। তিনি অপরাধের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাঁকে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলাও করা হয়েছে। ডঃ ইউনুসের সময় এমন ঘটনা আমাদের অবাক করেছে। সেনার উপস্থিতিতে আদালতে তাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে চিঠিতে। বলা হয়েছে আদালত প্রাঙ্গনে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে।

চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার ও আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁর চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে। শাহরিয়ার কবিরের মানবাধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, অবিলম্বে শাহরিয়ার কবিরকে জামিনে মুক্ত করার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে ভিত্তিহীন সব মামলা থেকে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে। তাঁর চলাচলের জন্য হুইল চেয়ার সহ সকল চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া আইনি সহায়তার পাশাপাশি পরিবারের সদস্য এবং সহকর্মীদের সাথে শাহরিয়ার কবিরের যোগাযোগ নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।

শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত লেখক। শিশু সাহিত্যিক, মানবাধিকার, সাম্যবাদ, ইতিহাস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বহু বই লিখেছেন তিনি। বাংলাদেশের মৌলবাদী জঙ্গি শক্তির বিরুদ্ধে সদা সরব হয়েছেন তিনি।

গণহত্যার অভিযোগ এনে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত সরকার গত ১৬ সেপ্টেম্বর শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করে। বাংলাদেশের পুলিশের তরফে ঢাকার বাড়ি থেকে রাত বারোটা নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। শাহরিয়ার আজীবন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেছেন। জামাতের কাছে তাই তিনি পছন্দের পাত্র নন। তাই যখনই তারা সুযোগ পেয়েছেন তখনই এই লেখকের উপর আক্রমণ চলেছে। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন শাহরিয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *