স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ২ অক্টোবর: আর সাধারণ পাঁচটা বাড়ির মতো ৫ ইঞ্চি বা ১০ ইঞ্চির গাঁথনি নয় তিন ইঞ্চির গাঁথনি দিয়ে তৈরি হয়েছিল কৃষ্ণনগরে এই দুর্গাবাড়ি। তার থেকেই স্থানীয় লোকজনের কাছে এই বাড়ি তিন ইঞ্চি দুর্গাবাড়ি নামে পরিচিত। তবে বাড়ির নাম তিন ইঞ্চি দুর্গাবাড়ি হলেও মূর্তি কিন্তু স্বাভাবিক অন্যান্য বনেদি বাড়ির পুজোর মতই।
বংশের পঞ্চম পুরুষ শ্রীগঙ্গারামের সময় থেকে আনুমানিক ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার উজানচর গ্রামে প্রথম দুর্গা পুজোর সূচনা হয়েছিল এই দাশ পরিবারে। পরবর্তীতে স্বর্গীয় শ্রীরাধাকান্ত, গণেশ ও কৈলাসের পর নবম পুরুষ স্বর্গীয় শ্রী বিজয় কুমার দাসের তত্বাবধানে দেশ ভাগের সময় এদেশে পুজো স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে কৃষ্ণনগরে অবস্থিত দুর্গাবাড়িতে এই পুজো হয়ে আসছে।
এই পুজো এইবছরে ২৪৮ তম বর্ষে পদার্পন করল। কথিত আছে, এই দাশবংশের পঞ্চম পুরুষ স্বর্গীয় শ্রী গঙ্গারাম মহাশয় একদিন সন্ধ্যাবেলায়, নৌকা করে আগমনী গান (এঁদের তখনকার পেশা ছিল) গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরছিলেন, হঠাৎ পরনে লাল শাড়ি পরা সাক্ষাৎ মাদুর্গার দর্শন পান গঙ্গারাম। আগমনী গান শুনে
মাদুর্গা খুশী হয়ে, দুর্গাপুজো করার আদেশ দেন গঙ্গারামকে।
কিন্তুু গঙ্গারাম তাঁর দারিদ্রতার কারণ ব্যক্ত করেছিলেন মা দুর্গাকে। তিনি জানান, তাঁর পক্ষে পুজো করার মতো সামর্থ্য একেবারেই নেই বললেই চলে। কিভাবে পুজো করবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি মাদুর্গার আদেশ পান নদীর ঘাটে যে কাঠ জলে ভেসে আসবে তা দিয়ে মাদুর্গার কাঠামো বানিয়ে শুধু মাত্র চালকলা দিয়েই যেন মাদুর্গার পুজো করেন তিনি। আর স্বপ্নাদেশে মাদুর্গা যে মুর্তিতে দেখা দেবেন সেইরূপেই যেন তাঁকে পুজো করা হয়। এখনও মূর্তির বিশেষত্ব কার্তিক ও গণেশের পরস্পর স্থান পরিবর্তন দেখা যায়। কথিত আছে, সেবার সময়াভাবে তাড়াতাড়ি প্রতিমা গড়তে গিয়ে পাল মহাশয়ের ভুলে কার্তিক ও গণেশের স্থান পরিবর্তন হয়ে যায়, তখন দাস পরিবার চিন্তায় পরে যায় যে এই অল্প সময়ের মধ্যে কি ভাবে সম্ভব পুনরায় মূর্তি নির্মাণ করে পুজো করা? তখন মাদুর্গার আদেশ পাওয়া যায়, যেভাবে আছে ঐভাবেই পুজো করা হোক। এখনো দুর্গাবাড়িতে মাদুর্গার পুজো চালকলা প্রসাদ দিয়ে নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে হয়ে আসছে।
পুজো হয় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে। আগে এই পুজো উপলক্ষে প্রতিদিন বলি হতো। সপ্তমীতে একটা ছাগ বলি, অষ্টমীতে একটা, নবমীতে দুটো, সন্ধি পুজোতে একটা এবং কালীপুজো যেটা হবে তার জন্য দুটো মোট সাতটা বলি হত।
যেহেতু চামুণ্ডা রূপে এই দেবীর পূজা হয় তাই বর্তমানে শুধু সন্ধি পুজোতে যে বলি হয় সেটা ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নববীর দিন কলা বলি হয়। চাল কুমড়ো, আঁখ বলি হয়। তার পাশাপাশি চাল কুমড়োর উপর ময়দা দিয়ে একটা মানবাকৃতির রেপ্লিকা তৈরি করে বলি দেওয়া হয়, যাকে বলা হয় শত্রু বলি।