আন্দোলনে নামছে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্প ‘যুবশ্রী’র ছেলেমেয়েরা, ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতা অভিযানের ডাক

আমাদের ভারত, কলকাতা, ৪ ফেব্রুয়ারি: মুখ তুলে তাঁদের দিকে কেউই তাকায়নি। বাম সরকারের আমলেও যা অবস্থা ছিল বর্তমান সরকারের আমলেও প্রায় একই। ফলে জীবনে বেকারত্বর জ্বালা নিয়ে চাকরির জন্য দ্বারেদ্বারে ঘুরছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম সাধের প্রকল্প এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম নথিভুক্ত যুবশ্রী ভাতাপ্রাপ্ত বেকার ছেলে মেয়েরা। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতা অভিযানের ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ যুবশ্রী এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংক কর্মপ্রার্থী সমিতির রাজ্য কমিটি।

উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর কলকাতার নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে যুবশ্রী প্রকল্পের উদ্ধোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের করতালিতে প্রশংসা কুড়িয়ে ছিল রাজ্য সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই সেই দিনটির কথা আজও ভুলতে পারেননি এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত ছেলে মেয়েরা। কারণ যুবশ্রী প্রকল্পের ভাতা প্রাপকদের দাবি ওইদিন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক-দুবছরের মধ্যেই এই এক লক্ষ ছেলেমেয়েকে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ৭ বছর হতে চললেও এই প্রকল্পের ছেলে মেয়েরা প্রদীপের আলোর নীচে অন্ধকারে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। চাকরি তো দূরঅস্ত। মাসে যে দেড় হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয় তাও সঠিক ভাবে মেলে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রকল্পে চাকরির আশায় থেকে আবার অনেকেরই বয়স চল্লিশ পার হয়ে গেছে। কারো কারো নাম আবার নানা অজুহাতে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে বেকার জীবন নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় ভাতাপ্রাপ্ত ছেলে মেয়েরা। কিভাবে পরিবার চলবে? বৃদ্ধ বাবা মাকে নিয়ে তাই অথৈ জলে পড়েছে রোজগারহীন এই শিক্ষিত বেকার ছেলে মেয়েরা।

যুবশ্রী ভাতা প্রাপক মফিজুল হক বলেন, ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে প্রায় ৩৪ লক্ষ ছেলেমেয়ের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে এক লক্ষ ছেলেমেয়েকে ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের উদ্ধোধনের দিন নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের দু’বছরের মধ্যে চাকরির আশ্বাস দিয়েছিলেন। ডি গ্রুপ পদে নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল কিন্তু ৭ বছর হয়ে গেলেও এনিয়ে কেউই কোনও উচ্চবাচ্য করছে না। আমাদের ভবিষ্যত জীবন ক্রমশই অন্ধকারের দিকে চলে যাচ্ছে। এখানে চাকরির আশায় থেকে বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। যে দেড় হাজার টাকা দেওয়া হয় সেটা দিয়ে প্রশিক্ষণ নিই। সুতরাং আমরা পেট চালাব কি করে?’

আরএক ভাতা প্রাপ্ত যুবক শুভজিৎ দাস বলেন, ‘আমাদের চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল কিন্তু এখনও চাকরি পেলাম না। ভাতা দিয়ে যে প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে তা ছয় মাস পর পর প্রমাণপত্র সহ এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে দেখাতে হচ্ছে। না হলে নাম কেটে দেওয়া হচ্ছে ভাতা প্রাপকদের তালিকা থেকে।’ বাধ্য হয়েই আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ যুবশ্রী এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংক কর্মপ্রার্থী সমিতির রাজ্য কমিটি। ওইদিন রাজ্যের সমস্ত জেলা থেকে হাজার হাজার যুবশ্রী ছেলেমেয়েরা আন্দোলনে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠন নেতৃত্ব।

এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংকে প্রায় ৩৫ লক্ষ ছেলে মেয়ের নাম লিখিয়েছে। ফলে বিপুল সংখ্যক ছেলেমেয়ের একটা বড় অংশ পুরভোটের আগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে চলায় অস্বস্তিতে পড়তে চলেছে রাজ্য প্রশাসন।

ছবি: ২০১৩ সালে ৩ অক্টোবর নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে যুবশ্রী প্রকল্পের উদ্ধোধনের চিত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *