Violence, Bankura, পারিবারিক হিংসা থেকে খু*নের ঘটনা বাড়ছে বাঁকুড়াজুড়ে, উদ্বিগ্ন মহিলা কমিশন

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৮ মে: পারিবারিক হিংসা ও বিবাদ থেকে খুন। বাঁকুড়া
জেলাজুড়ে এই প্রবণতা দেখা দোওয়ায় উদ্বিগ্ন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যারা।বাঁকুড়া সংশোধনাগারে বন্দি ২৬জন মহিলার ঘটনা শুনে রীতিমতো স্তম্ভিত মহিলা কমিশনের সদস্যা আর্চনা মজুমদার। বাঁকুড়া জেলা সংশোধনাগারে ২৬ জন মহিলা কয়েদি বন্দি রয়েছে। এই ২৬ জনের মধ্যে প্রায় ২০ জনই পারিবারিক হিংসার ঘটনায় অভিযুক্ত। এদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই রয়েছে খুনের অভিযোগ।এছাড়া ৮ জন সাজাপ্রাপ্ত মহিলা কয়েদির বিরুদ্ধে পারিবারিক হিংসা এবং খুনের অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা অর্চনা মজুমদার মঙ্গলবার এই তথ্য জানান।

জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা অর্চনা মজুমদারের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল এদিন বাঁকুড়া সংশোধনাগারে যান এবং সেখানে মহিলা বন্দিদের জীবন যাপন ও পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন। তার পরই অর্চনাদেবীকে এই উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এই পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন যে, পারিবারিক হিংসা এমন জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে যে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে খুনখুনি হয়ে যাচ্ছে। তার আগে বিবাদ থামাছে না। এ বিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে আরও উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেও অভিমত প্রকাশ করেন মহিলা কমিশন।

উল্লেখ্য, চুরি বা ডাকাতির তালিকায় নাম নেই অধিকাংশ মহিলা কয়েদির। চলতি বছরে জেলায় ঘটে যাওয়া পারিবারিক হিংসায় খুনের কয়েকটি ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়ে যায়। গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মদ্যপ স্বামীকে লাঠিপেটা করে খুন করেন স্ত্রী, এমনই অভিযোগ ওঠে বাঁকুড়ার ওন্দা থানার বিনোদনগরে। মৃত ব্যক্তির বয়স (৪১)। এমনকি স্বামীকে খুন করেও অনুতপ্ত নন স্ত্রী। পারিবারিক বিবাদ এমনই পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অভিযুক্ত স্ত্রীর বক্তব্য, দীর্ঘদিন অত্যাচার সহ্য করতে করতে অতিষ্ট হয়ে তক্কেতক্কে ছিলেন তিনি। সেদিন সুযোগ পেয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। এই বিষয় খতিয়ে, দেখে জানা যায় যে, ঘটনার দিন মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে ফেরেন স্বামী। বাড়ির পিতলের বালতি বিক্রি করে ফের মদ খেতে চায় স্বামী। অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় সেই কথা শুনতে পাননি স্ত্রী। সেই রাগে স্ত্রীকে গালিগালাজ করতে থাকে স্বামী। সেই সময় মেজাজ হারিয়ে সামনে থাকা লাঠি নিয়ে স্বামীকে মারতে থাকে স্ত্রী। সেই লাঠির ঘায়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান স্বামী। গ্রামে ইট ভাটায় কাজ করতেন স্ত্রী। এই ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। সংসার চালাচ্ছেন। ছোট ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র। তার পড়ার খরচ চালাচ্ছেন। বড় ছেলে গুজরাটে কাজ করতে গেছে। অন্যদিকে মদ্যপ স্বামী কাজ না করে স্ত্রীকে চাপ দিয়ে, বাড়ির জিনিস বিক্রি করে মদ খেয়ে চলেছে। সমাজসেবী ঝর্ণা গাঙ্গুলি ও সঙ্গীতা দেবীদের অভিমত, একমাত্র কাউন্সিলিং ছাড়া এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়।

গত ২১ মে ২০২৫ ছাতনার কাঁটাপাহাড়ি গ্রামে পারিবারিক বিবাদের জেরে স্ত্রী (৫৭) নির্মম ভাবে খুন করে স্বামীকে (৬০)। স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তিনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছিলেন না। ঘটনার দিন এই দম্পতির মধ্যে পারিবারিক বিষয়ে বাদানুবাদ হয়। সেই সময় স্ত্রী হঠাৎই কাটারি দিয়ে স্বামীর গলায় আঘাত করে। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ছাতনা থানায় মায়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ছেলে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ছাতনা থানার পুলিশ অভিযুক্ত ওই মহিলাকে গ্রেফতার করে।পারিবারিক বিবাদে শুধুই যে স্ত্রীর হাতে স্বামীর মৃত্যু ঘটছে তাই নয়। উল্টো ঘটনাও সমান ভাবে ঘটে চলেছে। এসব দুর্ঘটনা আটকাতে হলে পারিবারিক বিবাদের তথ্য সংগ্রহে জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন জেলার বিশিষ্টজনরা।

পারিবারিক বিবাদের তথ্য যখন নিজেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এসে পৌঁছায় ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। গত ২১ মে ২০২৫ সিমলাপাল থানার মাচাতোড়ার বাঁশি গ্রামে স্ত্রীকে নালায় ফেলে খুন করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর সিমলাপাল থানায় আত্মসমর্পণ করেন স্বামী। স্বামী পেশায় কৃষক। তাদের মধ্যে প্রায়শই ঝামেলা লেগে থাকত। ঘটনার দিন রাতে ঝামেলা হয়। এই ঝামেলার পর স্ত্রীকে বাড়ির পিছনে নালায় ফেলে শ্বাসরোধ করে খুন করে অভিযুক্ত স্বামী। স্ত্রীকে খুনের পর অভিযুক্ত নিজেই সিমলাপাল থানায় আত্মসমর্পণ করেন। দম্পতির ছেলে ও বউমা উপরের ঘরে শুয়েছিলেন।তারা খুনের বিষয়ে কিছুই টের পাননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *