Sukanta, Police, Hindu, হিন্দুরা কেন বার বার আক্রান্ত হবে? পুলিশকে প্রশ্ন সুকান্তর

আমাদের ভারত, হাওড়া, ২৭ জানুয়ারি: “কেন হিন্দুরা বারবার আক্রমণের শিকার হবে?” শনিবার দুপুরে বেলিলিয়াস রোডে মিছিলে বাধা পেয়ে পুলিশ কর্তাকে এই প্রশ্ন করেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সুকান্তবাবু বলেন, “এই মন্ত্রী অরূপ রায়, অরূপ খানরা যদি ভাবেন হিন্দুদের তাড়িয়ে হাওড়াকে পাকিস্তান বানাবেন। আমরা তা হতে দেব না। আমরা লড়াই করব। অরূপকে বোঝাব কত ধানে কত চাল।”

সোমবার অযোধ্যায় রাম মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে হাওড়ার কিছু অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়ায়। সম্প্রতি হাওড়া ময়দানের কাছে হিন্দুরা আক্রান্ত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন হিন্দু। শনিবার সুকান্তবাবু স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে আক্রান্ত ও আহতদের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ এলাকায় যান। বড় পুলিশ বাহিনী তাঁদের পথরোধ করে।

সুকান্তবাবু পথরোধের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ বলে, ১৪৪ ধারা আছে। সুকান্তবাবু তখন বলেন, আমি তাহলে পাঁচ জনের কম লোককে নিয়ে যাব। তাহলে তো ১৪৪ ধারায় ফেলতে পারবেন না? পুলিশ তখন বলে, ‘না স্যর। এলাকায় উত্তেজনা ছড়াবে।’ সুকান্তবাবু বলেন, ‘এই রাস্তায় আপনারা মার খেয়েছেন। আমাদের ছেলেরা মার খেয়েছে। আপনারা তখন কোনও ব্যবস্থা নেননি। আপনারা হয়ত হাতে চুরি পরেছিলেন। আমরা তো হাতে চুরি পরে বসে থাকতে পারি না!’

পুলিশ কর্তা বলেন, ‘আমরা তিনটে এফআইআর করেছি। এ নিয়ে তদন্তও চলছে।’ সুকান্তবাবু বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা, আপনারা মার খেয়েছেন, সারা দেশ তা দেখেছে।’ তিনি ১৪৪ ধারার সরকারি বিজ্ঞপ্তি দেখতে চান। পুলিশ তা বার করে দেখালে জানা যায় যেখানে পুলিশ গতিরোধ করেছে, সেখানে ১৪৪ ধারা নেই। সুকান্তবাবু বলেন, ‘কেন এখানে আমাদের আটকাচ্ছেন? আমরা তো ওই ১৪৪ ধারার মধ্যে ঢুকিনি। পথ ছাড়ুন। আমাদের সেই সীমা পর্যন্ত যেতে দিন।’

পুলিশকর্তা বলেন, ‘আমরা আমাদের বক্তব্য বললাম। এবার আপনাদের সিদ্ধান্ত।’ সুকান্তবাবু বলেন, ‘আপনাদের কথা শুনলে তো হাওড়া হিন্দুশূন্য হয়ে যাবে। তা তো হতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গ যখন ভারতে থাকবে না, তখন এসব বলতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গ যতদিন ভারতে আছে, ততদিন এসব চলতে পারে না। হিন্দুদের বাঁচার অধিকার আছে। অন্যান্যদের মত হিন্দুদেরও সাংবিধানিক অধিকার আছে। সেই অধিকার তো আপনারা কাড়তে পারেন না।’

সুকান্তবাবু বলেন, ‘১৪৪ ধারা জারি ৩০০ মিটার দূরে। ততটা কেন যেতে দেবেন না? কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? আইনের রক্ষক হরে কেন আইন ভাঙছেন?’ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘না স্যর। এখানেই দাঁড়িয়ে যান। আপনারা সহযোগিতা করুন।’ সুকান্তবাবু বলেন, ‘না না। তা হতেই পারে না’। বাধা ঠেলে তিনি সদলবলে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।

বিজেপি সমর্থকরা ধ্বনি দিতে থাকেন, ‘ইনক্লাব জিন্দাবাদ’। ‘পুলিশ তুমি উর্দি ছাড়ো, তৃণমূলের ঝাণ্ডা ধরো’। ‘শেখ শাহজাহানকে এতদিনে গ্রেফতার করতে পারে না, এখানে আটকাচ্ছে’। সুকান্তবাবু বলেন, ‘এ সরকার শেখ শাহজাহানদের সরকার, আমাদের সরকার নয়। পুলিশ যদি সত্যি কাজের হত, মন্ত্রী (অখিল) গিরিকে কান ধরে জিজ্ঞাসা করত শেখ শাহজাহান কোথায় আছে।’

সমবেত বিজেপি সমর্থকরা অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখেছে। এদের উচিত শিক্ষা না দিলে হবে না’। সুকান্তবাবু বলেন, ‘এত লাঠি-ঢাল নিয়ে আমাদের আটকানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। যখন মন্দিরের ওপর হামলা হল, কোথায় ছিলেন? এর আগে দোলে, রামনবমীতে হিন্দুরা আক্রান্ত হয়েছে। হরিজন বস্তিতে বার বার আক্রমণ হয়েছে’।

‘ভারতমাতা কী জয়!’ ‘তৃণমূলের দলদাস, ধিক ধিক ধিক্কার!’ প্রভৃতি ধ্বনি দিতে থাকেন বিজেপি সমর্থকরা। সুকান্তবাবু বলেন, ‘কী হচ্ছে? বারবার মন্দির আক্রান্ত হচ্ছে। এটা শ্যামাপ্রসাদের বাংলা। এটা রবীন্দ্রনাথের বাংলা।’ সম্প্রতি মাথায় আঘাত পাওয়া একাধিক বিজেপি সমর্থক এসে ভিড়ের মধ্যেই সুকান্তবাবুকে বলেন, কিভাবে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন। অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়নি।
স্থানীয় বিজেপি নেতা সঞ্জয় সিং অভিযোগ করেন, “আমাদের এলাকায় এসে ওরা মেরে যায়। পুলিশ আমাদের ১৫ জনকে গ্রেফতার করে। ওদের ৫ জনকে। যারা হামলা করছে, তারা শাস্তি পাচ্ছে না। যারা প্রতিবাদ করছে, তারাই শাস্তি পাচ্ছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *