আমাদের ভারত, ১৩ মার্চ: অবৈধ নির্মাণ সম্প্রতি রাজ্যে বহুল চর্চিত একটি বিষয়। বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ নির্মাণ ভাঙ্গার কাজ চলছে সরকারের নির্দেশে। শিল্প নগরী দুর্গাপুরও তার ব্যতিক্রমী হয়নি। পুজোর আগে থেকেই আসানসোল- দুর্গাপুরে উন্নয়ন পর্ষদের উদ্যোগে শহরজুড়ে অবৈধ নির্মাণ ভাঙ্গার কাজ চলছে। কিন্ত শহরে অবৈধ নির্মাণ ভাঙ্গার নির্দেশদাতা চ্যায়ারম্যানের বিরুদ্ধেই এবার অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখনই দুর্গাপুরে আসেন তিনি ওই চেয়ারম্যানের অবৈধ নির্মাণের আওতায় থাকা হোটেলেই থাকেন। আর এই ঘটনায় রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সরব হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দুর্গাপুর নগর নিগম ও আসানসোল- দুর্গাপুরে উন্নয়ন পর্ষদের দুটি চিঠি পোস্ট করে এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন। সুকান্ত মজুমদারের কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস একের পর এক দুর্নীতিতে ডুবে যাচ্ছে। দলের নেতারা যারা সিন্ডিকেট এবং কাটমানি খেয়ে ব্যাঙের মতো ফুলে উঠেছেন, তাদের বেনামি সম্পত্তি যে কাউকে অবাক করে দেবে।”
এরপরই তিনি দুর্গাপুরের ঘটনার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কবি দত্তের কথাই ধরুন, তার ‘বেনামি’ বিলাসবহুল হোটেলটির কোনও অনুমোদিত পরিকল্পনা ছিল না বলে জানাগেছে। তবুও এটি বছরের পর বছর ধরে শহরের বুকে ব্যবসা করে চলেছে।
সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেছেন, এই অবৈধ ভাবে নির্মিত হোটেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে থাকেন। তিনি লিখেছেন, দুর্গাপুরে যখনই আসেন তখন সেখানে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। শেষে তিনি দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবিলম্বে হোটেলের মালিকানা সম্পর্কিত সত্যতা জনসমক্ষে আনুন। তিনি লিখেছেন,
“মুখ্যমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে জনসমক্ষে এই হোটেলের মালিকানা সম্পর্কিত সত্যতা স্পষ্ট করুন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, হোটেলের কোনও অনুমোদিত পরিকল্পনা ছিল না, তবু সেই হোটেল কিভাবে শহরের বুকে ব্যবসা করছে জনগণের কাছে তার ব্যাখ্যা করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। কীভাবে তাঁর সরকার এবং প্রশাসন দুর্গাপুরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন অবৈধ নির্মাণকে আড়াল করছে? ভুয়ো সততা, নাটকীয় নির্বাচনী প্রচারের মাধ্যমে—আর কতদিন বাংলাকে বোকা বানানো হবে? উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে!”
জবরদখল রুখতে আসানসোল- দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের একাধিক সক্রিয় পদক্ষেপ দেখা গেছে। কিন্তু সেই আসানসোল- দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের হোটেলের বিরুদ্ধে জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে। ওই হোটেলের নির্মাণ হয়েছে জবর দখল হওয়া জমিতে। তাই আসানসোল- দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা হোটেল ব্যবসায়ী কবি দত্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন এডিডিএর মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিরিক রাজু মিশ্র। ২৫ ফেব্রুয়ারি চিঠিতে রাজু মিশ্র দুর্গাপুর নগর নিগমের কমিশনার আবুল কালাম আজাদকে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, আইন মোতাবেক যা যা ব্যবস্থা গ্রহণ করার তা করুন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, শহরের একটি হোটেলের বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত অভিযোগের কথা।
সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কৌস্তুভ দাস দুর্গাপুরের ব্যবসায়ী শান্তনু মিশ্রের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে একটি মামলাও দায়ের করেছেন। মামলাকারীর দাবি, সরকারি সংস্থার পদে বসে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চেয়ারম্যান যা ইচ্ছে তাই করছেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, তার এই কাজে শহরের রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি প্রশাসনের অধিকাংশ সাহায্য করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসিয়ে দিয়েছেন বলে একটা লোক যা খুশি তাই করবে আর বাকিরা তার তালে তালে মাদল বাজাবে সেটা হবে না। তাঁর কথায় সিটি সেন্টার আর মামড়া বাজার এলাকায় রাস্তা চওড়া করার নামে অন্য দোকান ও ঘরের সামনে ভাঙ্গচুর করা হলেও কৌশল করে নিজের হোটেলটিতে আসানসোল- দুর্গাপুরে উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান বাঁচিয়ে নিয়েছেন। এসবের কি কোন বিচার হবে না?”