জল যন্ত্রণায় নাজেহাল পশ্চিম মেদিনীপুর, ফের ঘূর্ণাবর্তের ভ্রুকুটিতে আতঙ্ক

জে মাহাতো, আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ২৮ সেপ্টেম্বর: দুর্যোগ কমলেও কমছে না দুর্ভোগ। ফের সর্তকতা জারি হল। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে আবার নতুন করে দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে দুই মেদিনীপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলিতে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে সোমবার থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে বাংলার বিভিন্ন জেলায়। 
এমনিতেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা, সবংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলবন্দি। প্লাবিত এলাকার বহু বাসিন্দা এখনও ত্রাণ শিবিরে দিন কাটাচ্ছে। সবং ও পিংলা এলাকার বিভিন্ন স্কুল বাড়ি এখনও জলে ডুবে রয়েছে। এলাকার গ্রামীণ সড়কগুলির ওপর দিয়ে বইছে জল। বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পিংলার পিন্ডরুই এলাকার চকচন্ডীয়া এলাকায় নদীর ধারে রয়েছে একটি রিভার পাম্পিং প্ল্যান। ওই পাম্পের সাহায্যে এলাকার অতিরিক্ত জল নিকাশি ব্যবস্থার মাধ্যমে ফিরিয়ে দেওয়া হয় নদীতে। কিন্তু সেটিও কয়েক বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে এই সমস্ত এলাকায় জল যন্ত্রণার ছবিটি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল ভক্তা জানান, বৃষ্টির জমা জলে এই সমস্যার মুখোমুখি প্রতিবছরই হতে হচ্ছে। ফলে চাষবাসের চরম ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। ঘর বাড়ি ও চাষের জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ফলে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। ওই এলাকার বিকাশ রানা, গোপাল খাটুয়া সহ বেশ কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা তাঁদের এই দুর্দশার জন্য স্থানীয় শাসক দলের নেতৃত্বকেই দায়ী করেছেন। তাঁরা জানান, এই এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার বিরোধী দল করার জন্য তাদের কার্যত সমস্ত রকম সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাদের এই দুর্দশা দেখেও, না দেখার ভান করছেন শাসক দলের নেতারা। মিলছে না কোনও ত্রাণ সামগ্রীও। ফলে চরম দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই চলছে দিন গুজরান।

অন্যদিকে, পিন্ডরুই ৮ নং অঞ্চলের প্রধান কৃষ্ণ প্রসাদ বেরা জানিয়েছেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জলমগ্ন হয়ে এলাকার মানুষদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাতে, মানুষের  কিছুটা ক্ষোভ থাকবেই। কিন্তু, জল নিকাশির ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ ভিত্তিহীন। সমসারা ও চকচন্ডী এলাকায় যে দুটি পাম্প রয়েছে তা চালিয়ে জল বের করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু যে পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ফের জল জমে যাওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে দুর্যোগ কাটলেই দ্রুততার সাথে নিকাশির কাজ শুরু করা হবে।”

পিংলার চন্ডীয়া এবং সবংয়ের কেলেঘাই নদীর উঁচু বাঁধের উপর অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিবাস করছেন বহু অসহায় পরিবার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য ত্রাণ দেওয়া চলছে, দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হলেও ফের নতুন করে বৃষ্টির পূর্বাভাসে চরম দুশ্চিন্তায় তাদের কপালে এখন বড়োসড়ো চিন্তার ভাঁজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *