হিমবাহ ভেঙ্গে তুষার ধস, বিরাট বিপর্যয় উত্তরাখণ্ডে, জোশীমঠে উদ্ধার ১০ মৃতদেহ, নিখোঁজ ১৫০, উদ্ধারকাজে নেমেছে সেনা

আমাদের ভারত, ৭ ফেব্রুয়ারি: হিমবাহ ভেঙ্গে তুষার ধস নামল উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায়। রবিবার সকালে জোশীমঠের কাছে তুষার ধসের কারণে ধৌলি গঙ্গার জলস্তর প্রবলভাবে বেড়ে যায়।তীব্র জলোচ্ছ্বাসে একের পর এক গ্রাম ভেসে যেতে শুরু করে। ভেঙ্গে যায় সেতু। দুপুর পর্যন্ত ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ ১৫০ জন। এরা তপবন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করছিলেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে এদের মধ্যে কেউ হয়তো আর বেঁচে নেই।

উত্তরাখণ্ডের মুখ্য সচিব ওম প্রকাশ জানিয়েছেন, আটকে পড়া জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অনেকেই জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে থাকতে পারেন। নিহত ও আহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রেনি গ্রামের তপবন এলাকার ঘটনাস্থলের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বাঁধভাঙ্গা জল নদীর দু’পাশে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে তীব্র গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২০০ জনের উদ্ধারকারী দল। চামোলি থেকে ঋষিকেশ যাওয়ার রাস্তায় ইতিমধ্যেই রেড এলার্ট জারি করা হয় পরে হরিদ্বার পর্যন্ত রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটারে লিখেছেন, তার সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী কথা হয়েছে। তিনি গোটা বিষয়ের উপরে নজর রাখছেন। প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘গোটা দেশ উত্তরাখণ্ডের পাশে আছে। উত্তরাখণ্ডের বিপন্নদের জন্য প্রার্থনা করছে দেশবাসী। আমি নিজে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। উদ্ধারকাজের প্রতিমুহূর্তের খবর রাখছি আমি।’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ট্যুইট করে জানিয়েছেন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ইতিমধ্যে যোশীমঠ ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। সব রকম ভাবে এই সংকটে পরিস্থিতিতে সাহায্য করা হবে। পরে আরও একটি টুইটে তিনি জানান বিপর্যয় বাহিনীর আরো কয়েকটি দল দিল্লি থেকে বিমানে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।

উত্তরাখণ্ডে চালু করা হয়েছে একাধিক হেল্পলাইন নম্বর। কেউ যদি ঘটনাস্থলে আটকে পড়ে থাকেন তাহলে ১০৭০ অথবা ৯৫৫৭৪৪৪৪৮৬ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য জানিয়েছেন উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী একইসঙ্গে পুরনো ভিডিও দেখিয়ে গুজব ছড়ানোর ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত।

ধসের কারণে ধৌলিগঙ্গার দু’পাশের গ্রাম খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে তপবনের কাছে নন্দাদেবী হিমবাহের ফাটল ধরায় ঋষি গঙ্গা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের চামুলি থানার পুলিশ জানিয়েছে অলকানন্দা নদীর তীরে থাকা বসতি গুলি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।ভাগীরথী নদীর গতিপথ বন্ধ করা হয়েছে।

শুধু উত্তরাখণ্ড নয় উত্তরপ্রদেশেও গঙ্গার ধারে জারি করা হয়েছে চূড়ান্ত সর্তকতা। এ ঘটনায় আটক আটকা পড়েছেন বহু পর্যটক। শ্রীনগর ঋষিকেশ লাগোয়া অঞ্চল খালি করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালের মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি ও হড়পা বানে উত্তরাখণ্ডের ৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। রবিবার এই বিপর্যয় সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আবারো ফিরিয়ে আনল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *