সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৫ অক্টোবর: হাতির হানা থেকে রক্ষা পেতে বাঁকুড়ায় ব্যতিক্রমী কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা হয়ে থাকে রামকানালী গ্রামে। বুনো হাতির হানা থেকে ফসল ও সম্পত্তি রক্ষার প্রার্থনা জানিয়ে কোজাগরী পূর্নিমা তিথিতে গজ লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। আবার কোথাও গাছকে কোজাগরী লক্ষ্মী মেনে পূজা করা হয় গ্রামবাসীদের সমৃদ্ধি কামনা করে।
বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের জঙ্গলঘেরা রামকানালি গ্রামে হাতির হাত থেকে ফসল বাঁচাতে গজলক্ষ্মীর পূজা করা হয়। জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম হওয়ায় রামকানালী এলাকার প্রায়ই লোকালয়ে ও চাষের জমিতে ঢুকে পড়ে হাতির দল। ফসল, সম্পত্তি ও বাড়ি- ঘরের ব্যাপক ক্ষতি করে। তাই হাতির হাত থেকে ঘরের লক্ষ্মী মাঠের ফসল বাঁচাতে গ্রামে শুরু হয়েছিল গজ লক্ষ্মীর পূজা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে প্রায় ১২৭ বছরের প্রাচীন এই পুজো। প্রাচীন রীতি মেনে গজলক্ষ্মীর পূজা হয়ে আসছে মহাধুমধামের সঙ্গে। তবে প্রতিমা ও আচার অনুষ্ঠানে আর পাঁচটা লক্ষ্মী পুজোর সঙ্গে মেলে না রামকানালি গ্রামের মাহিষ্য পরিবারের এই লক্ষ্মী পুজো। এখানে লক্ষ্মীর প্রতিমা থাকে হাতির পিঠে। এলাকায় মানুষের কাছে গজলক্ষ্মী হিসাবে বেশী পরিচিত। পূর্ব পুরুষদের হাতে গড়া এই পুজো আজও সমান ভাবে পালন করে চলেছেন মাহিষ্য পরিবারের মানুষজন।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, হাতির হাত থেকে ফসল বাঁচাতে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে হাতির পূজা করা হয়। তাই বিগ্রহ এরকম। কৃষি প্রধান রামকানালী গ্রামের ৪০টি মাহিষ্য পরিবারের প্রধান পুজো এই গজলক্ষ্মী। গ্রামবাসীদের অনেকের কৃষিজমি রয়েছে জঙ্গল লাগোয়া এলাকায়। হাতির দল প্রায় খাবারের খোঁজে হামলা চালায় কৃষি জমিতে। তাই গজরাজদের তুষ্ট করে ফসল বাঁচানোর আশায় দেবীলক্ষ্মীর পাশাপাশি একই সঙ্গে গজরাজেরও পূজা করে আসছেন গ্রামবাসীর।গ্রামের মন্দিরে এই দেবী গজলক্ষ্মীর পূজা হয়। এলাকার মানুষের বিশ্বাস গজলক্ষ্মীর পূজা করলে গজরাজ সন্তুষ্ট হয়ে ফসলের ক্ষতি করেন না। লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। কিন্তু রামকানালি গ্রামে লক্ষ্মীর বাহন গজরাজ। অন্যদিকে রামকানালি স্টেশনের কাছে গত ২০২২ সাল থেকে গাছকে কোজাগরী লক্ষ্মী মাতা মেনে পূজা করা হয়ে আসছে। বেলিয়াতোড়, বড়জোড়া সহ বাঁকুড়া মহকুমার অধিবাসীরা মিলিত হয়ে এই পূজা করে আসছেন।

