আমাদের ভারত, ১১ অক্টোবর: ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অর্থে সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অর্জিত স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ আজ পরাশক্তিসমূহের কূটনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে পরিণত হওয়ায় এদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে ৫ সদস্যবিশিষ্ট এক প্রতিনিধিদল বুধবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে এক স্মারকলিপিতে এ কথা জানিয়েছে। কমিশনের অপর চার সদস্য যথা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মোঃ আলমগীর এবং মোঃ আনিছুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঐক্য পরিষদের তরফে এই প্রতিবেদককে জানানো হয়েছে, “আশা করতে চাই, উৎসব ও আনন্দমুখর পরিবেশে এ দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জোট আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তুলবে।” প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে পঠিত ঐক্য পরিষদের স্মারকলিপিতে এ কথা বলা হয়।
স্মারকলিপিতে গভীর দুঃখের সাথে বলা হয়, সকলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও অতীত এ দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত আড়াই কোটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্যে মোটেই সুখকর ছিল না। একদিকে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদে তাদের যথাযথ অংশীদারিত্ব-প্রতিনিধিত্ব থাকেনি, অন্যদিকে নির্বাচনে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
নির্বাচনে ব্যক্তিস্বার্থে, গোষ্ঠীস্বার্থে ও রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাকে নির্বাচনী প্রচারণায় যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, প্রায় সকল ধরনের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলসমূহের একাংশ স্লোগান দেয় ‘জয় বাংলা জয় হিন্দ লুঙ্গি খুইল্লা ধুতি পিন্দ’, ‘শেখ হাসিনার বাপের নাম হরে কৃষ্ণ হরে রাম’, ‘হিন্দু যদি বাঁচতে চাও বাংলা ছেড়ে চলে যাও’।
রাজনৈতিক দলের আরেকাংশ নির্বাচনী প্রচারণায় হিন্দু এলাকায় যাওয়ার সময় শ্লোগান দেয় ‘জয় বাংলা’ আবার মুসলিম এলাকায় যাওয়ার সময় শ্লোগান তোলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ নৌকার মালিক তুই আল্লাহ’।
নির্বাচনের পূর্বাপর ব্যক্তি হিসেবে নয়, সংখ্যালঘু হিসেবে লক্ষ্য করে তাদের উপর নির্বিচারে নিপীড়ন, নির্যাতন চালানো হয়, ঘর-বাড়ী উপাসনালয়ে হামলা চালানো হয়, জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। এ ধরনের অসুস্থ কদর্যকর রাজনৈতিক বাতাবরণ তৈরী করে সংখ্যালঘুদের নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি স্বার্থান্বেষী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সামাজিক ও রাজনৈতিক চক্র শারদীয় দুর্গোৎসবের আগে নানান জায়গায় মঠ-মন্দিরে, উপাসনালয়ে আবারো হামলা শুরু করেছে, মূর্তি ভাঙ্গচুর অব্যাহত রেখেছে।
স্মারকলিপিতে এদেশের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদানে আগ্রহের কথা ব্যক্ত করে ৯টি দাবি তুলে ধরে বলা হয়, আপনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের উপর আমরা পরিপূর্ণ আশা ও আস্থা রাখতে চাই। এটাও সত্য যে অতীতে আমরা নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রেখে হতাশ হয়েছি। ভবিষ্যতে এ হতাশার চোরাবালিতে আমাদের আর নিক্ষেপ হতে হবে না- এ আশা রাখতে চাই। এই আশা ও আস্থা পরিপূরণে কমিশন দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার সাথে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবে এবং যথার্থ সংসদ গঠনে সার্থক ভূমিকা পালন করবে, এ আশা ব্যক্ত করছি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রদত্ত স্মারকলিপি গ্রহণ করে এর প্রতিটি বক্তব্য ও দাবির সাথে ঐক্যমত পোষণ করে বলেন, সারা দেশে মানবিক মূল্যবোধের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের মনস্তাত্ত্বিক বিষয় উন্নয়নের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের। এর পরেও রাজনৈতিক-সাম্প্রদায়িক সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য রঞ্জন কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ ও জয়ন্ত কুমার দেব এবং উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, সাবেক জেলা প্রশাসক দেবাশীষ নাগ।