Birbhum, Madhyamik, মাধ্যমিকে সফল বীরভূমের দুই দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থী

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, সিউড়ি, ৩ মে: ছোট থেকেই দৃষ্টিশক্তির সমস্যা। সেই ছোটবেলায় বাবার সাথে গিয়েছিল ডাক্তার দেখাতে। চিকিৎসক সমস্যার আঁচ বুঝে পরামর্শ দেন অন্ধ স্কুলে ভর্তি হওয়ার। ছোট বয়সেই বাবা-মাকে ছেড়ে অন্ধ স্কুলে থেকেই শত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেকে গড়েছে রাহুল ওরাং। হতদরিদ্র খেতমজুর পরিবারের সন্তান সেই ছোট রাহুল আজ মাধ্যমিক উত্তীর্ন হয়েছে ৫১৫ নম্বর পেয়ে। যা রাহুলের দু-চোখের কোণ ভিজিয়েছে জলে। শুধু রাহুলই নন, তার সহপাঠী রঞ্জিত বাগদিও সমান প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে মাধ্যমিকে পেয়েছে ৫৩০ নম্বর। 

দুজনেই দৃষ্টিহীন। দু’জনেই বীরভূমের সিউড়ির শ্রী অরবিন্দ ইনস্টিটিউট ফর সাইটলেসের ছাত্র। ব্রেইল-এর মাধ্যমে পড়াশোনা। এমন ফলাফলে শুধু পড়ুয়াদের চোখে নয়, পরিবার-পরিজনদেরও চোখ দিয়ে গড়িয়েছে আনন্দের অশ্রুধারা।

বিশেষভাবে সক্ষম রাহুলের বাড়ি লাভপুরের বিপ্রটিকুড়ি গ্রামে। বাবা বিমল ওরাং সামান্য এক খেতমজুর। ছোট থেকে অন্ধ হোস্টেলে কাটানো এই বিমলের ছুটি পড়লেই বাবা- মায়ের চিন্তা হত ছেলেকে বাড়িতে কিকরে খাওয়াবেন? চিন্তা করতেন কিকরে ছেলেটাকে পড়াবেন। রাহুলের বাবা বিমল ওরাং ছেলের রেজাল্ট হাতে চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, “জন্মের পর থেকেই ছেলেটা চোখে দেখে না। তাই কিকরে মানুষ করব বুঝতে পারছিলাম না। মাস্টার মশাইরাই ওদের মানুষ করল।” 

লাভপুরের মালিতপুর গ্রামের বাসিন্দা অপর ছাত্র রঞ্জিত বাগদির পারিবারিক অবস্থা আরও করুণ। রঞ্জিতের রেজাল্টটুকু নিতে সিউড়ি আসার বাসভাড়া জোগারের জন্য ভাবতে হয়েছে বাবা মথুরা বাগদিকে। শ্রী অরবিন্দ ইনস্টিটিউট ফর সাইটলেসের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ দাসের কথায়, “দৃষ্টিহীন ছাত্রদের পড়াশোনা ব্রেইল পদ্ধতিতে হলেও, মাধ্যমিকের অধিকাংশ পাঠ্য এবং রেফারেন্স বই ব্রেইলে রূপান্তরিত করা হয় না। ফলে সেই বইগুলোর বিষয়বস্তু শুনে-শুনেই মনে রাখতে হয় ছাত্রদের। যদিও জেলাশাসকের উদ্যোগে অডিও রেকর্ডারের ব্যবস্থা হওয়ায় উপকৃত হয়েছে পড়ুয়ারা।”

বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেছেন, “আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি সাফল্য অর্জন করবে।”

সাফল্য তো এসেছে? তবে তা কপালের ভাঁজও চওড়া করেছে কৃতিদের। এরপর কী হবে? এই প্রশ্নে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *