হাতুড়ে চিকিৎসককে দিয়ে ভুয়ো নার্সিংহোমে ওষুধে ভ্রুণহত্যা গর্ভদাত্রীর, ধৃত আরও ২, বন্ধ নার্সিংহোম

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ৭ মার্চ: নিউ আলিপুরের সারোগেসি প্রতারণা কাণ্ডে ফের চাঞ্চল্যকর তথ্য এল তদন্তকারীদের হাতে। গর্ভদাত্রী মা হতে রাজি হয়েও ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন কাশ্মীরা বিবি। এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হলেও দুর্ঘটনায় ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার তত্ত্ব কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না তদন্তকারীরা। এবার কাশ্মীরাকে জেরা করেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারে এক হাতুড়ে চিকিৎসক ও তার জাল নার্সিংহোমের সন্ধান পেল পুলিশ।

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, একসময়ে হাসপাতালের ওটি বয় হিসেবে কাজ করে তারপর ১২ বছর ধরে ১৫০০০ রোগী দেখা ও অস্ত্রোপচার করে ফেলেছেন ওই হাতুড়ে চিকিৎসক। এলাকায় তাঁর এতটাই সুনাম যে, তিনি হাতুড়ে এটাই কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না। এক ব্যক্তির সাহায্যে ওই নার্সিংহোমে যান কাশ্মীরা। তারপর বিশেষ ওষুধের সাহায্যে গর্ভস্থ ভ্রুণ নষ্ট করেন। শুক্রবার মহিলার সাহায্যকারী আজিজুল রহমান পেয়াদা এবং হাতুড়ে চিকিৎসক গোপাল মালিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিল করে দেওয়া হয়েছে ওই চিকিৎসকের ভুয়ো নার্সিংহোম।

প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগে নিঃসন্তান এক দম্পতির অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ। তদন্তে জানা যায়, ওই দম্পতির কাছ থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছিলেন ওই মহিলা। পুলিশ গ্রেফতার করার পর তিনি জানান, দুর্ঘটনায় গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তারপর নিজেই ভ্রূণটি নদীতে ফেলে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু, ২৬ সপ্তাহের ভ্রুণ চিকিৎসকের সাহায্য ছাড়া ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়। ঘটনার তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পারে, বিধবা হয়েও গর্ভদাত্রী হতে রাজি হয়েও লোকলজ্জার ভয়ে মায়ের সাহায্যে মিনু হালদার নামে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মৃত সন্তান প্রসব করেন কাশ্মীরা। কিন্তু সুস্থ স্বাভাবিক ভ্রুণ মরে গেল কী করে? এটাই খটকা লাগছিল তদন্তকারীদের কাছে।

প্রশ্নের উত্তর পেতে ধৃত কাশ্মীরাকে নিরন্তর জেরা শুরু করেন তদন্তকারীরা। তদন্তে উঠে আসে, ১১ ডিসেম্বর থেকে ১১ জানুয়ারির মধ্যে তাঁর গর্ভপাত হয়েছে। পরে জানা যায়, নাম বদলে মা আম্বিয়া বিবির সঙ্গে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালে যান। সেখানে ১৭ জানুয়ারি তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন। জানা যায়, প্রসবের আগে ১৪ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মন্দিরবাজার থানা এলাকার সদাশিবপুরে ছিলেন তিনি। তদন্তকারীরা এ-ও জানতে পারেন, গোপাল মালিক নামে মন্দিরবাজারের এক হাতুড়ে চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রথমে গর্ভের ভ্রূণ নষ্ট করেন কাশ্মীরা। গোপাল তাকে কিছু ওষুধ দেন। কাশ্মীরা তা খাওয়ার পর ভ্রুণের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। তার পর ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে গিয়ে গর্ভপাত করান। স্থানীয় এক ব্যক্তি আজিজুল রহমান পেয়াদার মাধ্যমে কাশ্মীরা গোপালের কাছে পৌঁছছিলেন। আর এই কাজের জন্য গোপালকে ৪ হাজার টাকা দিয়েছিলেন কাশ্মীরা।

জানা গিয়েছে, ‘গোপাল ডাক্তার’ নামেই এলাকায় পরিচিত গোপাল মালিক। বছর তিনেক একটি বেসরকারি হাসপাতালের ‘ওটি বয়’ হিসাবে কাজ করতেন উচ্চমাধ্যমিক পাশ গোপাল। তারপর নিজের বাড়ির ৬ টি ঘরে ৮ টি বেড রেখে নার্সিংহোম বানিয়েছে গোপাল। সেখানে রোজ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী দেখেন। এখনও পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি অস্ত্রোপচার করে ফেলেছেন। শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতারের পর ওই নার্সিং হোম সিল করে দিয়েছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *