Tusu, Bankura, টুসু ভাসানে মাতোয়ারা বাঁকুড়ার গ্ৰামাঞ্চল

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৪ জানুয়ারি: মকর সংক্রান্তির দিন ভোর হতেই টুসু ভাসানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে বাঁকুড়ার গ্ৰামাঞ্চল। মকর সংক্রান্তির দিন ভোর থেকে মকর পরব আর টুসু ভাসান উৎসবে জনসমুদ্র হয়ে ওঠে বাঁকুড়ার বেশ কিছু এলাকা।

এদিন টুসু গান, বাজনা, হৈহুল্লোড়ে দিনভর মেতে ছিল দক্ষিণ বাঁকুড়ার পরকুল, পরেশনাথ, সিমলাপাল।সকাল থেকেই শিলাবতী আর কংসাবতী নদীতে ভিড় উপচে পড়ল মকর স্নানের। গত এক মাস ধরে প্রতি সন্ধ্যায় বাড়িতে বাড়িতে টুসু বন্দনার পরে এদিন ভোরে ভাসান দেওয়া হয় নদী বা পুকুরে। এই ভাসানকে ঘিরে দ্বারকেশ্বর, কংসাবতী, শিলাবতী এমনকি বিড়াই, কাঁসাই, কুমারী, দামোদর নদের পাড় ভরে উঠেছিল।বিষ্ণুপুরের পোকাবাঁধ, লালবাঁধ সহ বাঁধগুলি ভিড়ে ঠাসা ছিল ভোর থেকেই।উৎসবমুখর হয়ে ওঠে কেঞ্জাকুড়া।

উল্লেখ্য, টুসু কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ উৎসব। বাঁকুড়া, পুরুলিয়াজুড়ে অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি থেকে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত টানা এক মাস ধরে পালিত হয়। ধানের ক্ষেত থেকে এক গোছা নতুন আমন ধান মাথায় করে এনে খামারে পিঁড়িতে রেখে দেওয়া হয়। অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির সন্ধ্যায় গ্রামের কুমারি মেয়েরা একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো লাগিয়ে তাতে তুষ রাখেন। তারপর দুর্বা-ঘাস, গাঁদা ফুলের মালা প্রভৃতি দিয়ে সাজিয়ে, গায়ে হলুদ রঙের টিপ লাগিয়ে পাত্রটিকে পিড়ি বা কুলুঙ্গির উপরে স্থাপন করা হয়। প্রতি সন্ধ্যায় পূজিতা হন এই টুসু দেবী। গোটা পৌষ মাসজুড়ে প্রতি সন্ধ্যায় দেবীর উদ্দেশ্যে চিঁড়ে, গুড়, বাতাসা, মুড়ি ভোগ নিবেদনের সঙ্গে বাড়ির কুমারী মেয়েরা সুর করে টুসু গান গায়। গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শীতের সন্ধ্যায় এভাবেই টুসু বন্দনায় মেতে ওঠে মেয়েরা।

পৌষ মাসের শেষ তিন দিন চাঁউড়ি, বাঁউড়ি ও মকর নামে পরিচিত। মকর সংক্রান্তির দু’দিন আগে চাঁউড়ির দিনে গৃহস্থ বাড়ির মেয়েরা উঠোন গোবর-মাটি দিয়ে নিকিয়ে পরিষ্কার করে। ব্যবহৃত জামাকাপড় কাচা- ধোওয়া করা হয়। একে পৌষকালি তোলাও বলা হয়।এদিন তৈরি করা হয় চালের গুঁড়ো। বাঁউড়ির দিন পিঠে তৈরি হয়। চাঁছি, তিল, নারকেল ও রমাকড়াই-এর পুর দিয়ে বিভিন্ন আকার ও ধরনের পিঠে বানানো হয়। স্থানীয় ভাষায় যার নাম গড়গড়্যা পিঠে বা পুর পিঠে। এই বাঁউড়ির রাতেই অর্থাৎ মকর সংক্রান্তির আগের রাতে হয় টুসুর জাগরণ। মেয়েরা ঘর পরিষ্কার করে ফুল, মালা, আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলে। টুসু দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। অবিবাহিতা মেয়েদের পাশাপাশি বাড়ির বধূ ও বয়স্করাও টুসু গানে অংশ নেয়। সারা রাত ধরে গানের সুরে হয় টুসু জাগরণ। পর দিনই পৌষ সংক্রান্তি অর্থাৎ মকর। এই দিন ভোর থেকেই মেয়েরা গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীকে নিয়ে হাজির হয় স্থানীয় পুকুর কিংবা নদীতে। সেখানে টুসু বিসর্জন দেওয়া হয়। টুসুকে সুদৃশ্য চৌদলে স্হাপন করে, চারদিকে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুকুর বা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সমবেত মেয়েরা গান গেয়ে বিদায় জানায় টুসুকে।চারিদিকে তখন বিষাদের সুর। আর এই বিষাদের সুরে জলে ভাসতে ভাসতে দূরে চলে যায় টুসু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *