তিনটি প্রাণ বাঁচিয়ে রামপুরহাটের তুষ্টু এখন হিরো পুজো উদ্যোক্তাদের চোখে

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ১ অক্টোবর: নেতা, মন্ত্রী কিংবা কোনও চলচিত্র শিল্পী নয়। বীরভূমের রামপুরহাট দশেরপল্লি পুজো উদ্যোক্তাদের চোখে এখন আসল হিরো মৎস্যজীবী তুষ্টু লোহার। কারণ নিজের জীবন বাজি রেখে তিন তিনটি প্রাণ বাঁচিয়ে জেলার চোখে এখন হিরো তুষ্টুই। তাই এবার পুজোর উদ্বোধনের ফিতে কাটতে ডাক পড়েছিল তুষ্টুর।

তুষ্টু লোহার। বাড়ি নলহাটি থানার হরিদাসপুর গ্রাম। পেশায় মৎস্যজীবী তুষ্টু আর পাঁচটা দিনের মতো ব্রাহ্মণী নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর। সেসময় খুব বেশি জল না থাকায় নদীতে স্নান করতে নামেন গৃহবধূ শ্রাবণী মাল। কিন্তু হঠাৎ নদীর জলস্তর বেড়ে যায়। সেই জলে ভেসে যেতে থাকেন শ্রাবণী। গৃহবধূকে বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দেয় গ্রামের দুই যুবক রাহুল মাল ও উত্তম মাল। তাঁরাও জলের স্রোতে ভেসে যেতে থাকে।

নদীর পারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন চিৎকার শুরু করে দেয়। সেই চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে টিউব নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন তুষ্টু। নিজের জীবন বাজি রেখে একে একে তিনজনকে উদ্ধার করেন। তিনটি জীবন বাঁচিয়ে তিনিই এখন জেলার হিরো। তাই শুক্রবার রাতে রামপুরহাট দশেরপল্লী পুজোর ফিতে কেটে উদ্বোধন করলেন তিনিই।

দশেরপল্লী পুজো বয়স ৪৭ বছর। প্রতিবছর তাদের ভাবনায় মানুষকে নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাজস্থানের প্রাচীন জমিদার বাড়ির আদলে তৈরি করা হয়েছে মণ্ডপ। মায়ের মূর্তি সাবেকি। মূর্তি গড়েছেন বহরমপুরের শিল্পী অসীম পাত্র।

পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা কৌশিক সরকার বলেন, “আমরা পুজো সব সময় অরাজনৈতিক রাখার চেষ্টা করি। সেই ধারাবাহিকতা আজও সমানে চলে আসছে। এবার আমাদের চোখে আসল হিরো তুষ্টু লোহার। কারণ তাঁর জন্যই বেঁচেছে তিনটি প্রাণ। এরকম একজন মানুষকে দিয়ে পুজো উদ্বোধন করাতে পেরে আমরা গর্বিত।”

পুজো কমিটির পক্ষ থেকে তুষ্টুকে রাজকীয় সম্বর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করা হয়। সেই সম্মান পেয়ে আপ্লুত তুষ্টুর চোখের কোনে জল চিকিচিক করে ওঠে। তিনি বলেন, “তিনটি প্রাণ বাঁচিয়ে আনন্দ পেয়েছিলাম। তাঁর জন্য এতো সম্মান পাব ভাবিনি। অবশ্য সেই মুহূর্তে ভাবারও কোনও সময় ছিল না। এখন খুব ভালো লাগছে। যতদিন বাঁচব মানুষের জন্য বাঁচব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *